গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইলে প্রতিবছর মাঘের প্রথম দিন বসে মাছের মেলা। ঐতিহ্যবাহী এ মেলা এলাকায় জামাই মেলা নামে বিখ্যাত। এদিন মেলা থেকে মাছ কিনে জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে যান। মেলায় জামাই-শ্বশুরদের মাঝে চলে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। এবার মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবে মেতে উঠেছে সাধারণ মানুষ। মাছ ছাড়াও বসেছে হরেক রকমের পণ্যের পসরা। আয়োজকরা বলছেন, এক দিনব্যাপী এ মেলায় অন্তত দুই কোটি টাকার মাছ কেনা-বেচা হয়। আর দেশি-বিদেশি মাছ কিনতে বিভিন্ন জেলার মানুষ ভিড় করেন এখানে।
সরেজমিনে মেলায় ঘুরে দেখা যায়, নেই মাইকিং, কোনো ধরনের প্রচার। তারপরও লোকমুখে শুনে প্রতিবছরের মতো এবারও জামাই মেলায় আসছেন শত শত মানুষ। প্রায় আড়াইশ বছর ধরে উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালীয়া ও বক্তারপুর ইউনিয়নের বিনিরাইলে বসে ঐতিহ্যবাহী এ জামাই মেলা। নামে জামাই মেলা হলেও মূলত এখানে বিক্রি হয় ছোট-বড় দেশি-বিদেশি, সামুদ্রিক নানা পদের মাছ। মেলা উপলক্ষে সকাল থেকেই সহস্রাধিক দোকানে মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মাছ বিক্রেতারা। মেলায় চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। সামুদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা, শাপলা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছ। বড় আকারের মাছকে ঘিরেই জটলা বেশি ক্রেতাদের। জামাই-শ্বশুরদের মধ্যেও হয় এই মাছ কেনার নীরব প্রতিযোগিতা ।
বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা মেলায় মাছ বিক্রি করতে এসেছেন। এখানে উৎসবের আমেজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ক্রেতারা মাছ কেনেন। বেচা বিক্রিও ভালো।
এ মেলায় প্রকারভেদে ৫০০-১৬০০ টাকা কেজি দরে বেশির ভাগ মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে দিনব্যাপী এ মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৭০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ। এই বাঘাইড় মাছকে ঘিরে ক্রেতাদের জটলা লেগে থাকে। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় এক জামাই মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা বলেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়েননি। পরে চলে দর কষাকষি। এ সময় ক্রেতার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমান মাছটি দেখার জন্য।
কথা হয় কাপাসিয়া থেকে মেলায় আসা আশরাফ নামে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বহু বছরের পুরোনো এই মেলা দেখার ইচ্ছা ছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে, আমিও এসেছি। মেলায় ঘুরছি, কিছু মাছ শ্বশুরবাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যাব।’
বিনিরাইল মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশের স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ জানান, উপজেলার জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের মোহনায় বিনিরাইল গ্রামে বসে এই মাছের মেলা। প্রায় ২৫০ বছর ধরে কৃষকের ধান কাটার পর ওই জমিতে স্থানীয়রা এ মেলার আয়োজন করে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বিশাল আকৃতির মাছ। প্রতি বছর পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের প্রথম দিনে এ মেলা বসে। নদী ও সাগরের বড় বড় মাছ, মিষ্টি, ফার্নিচার, তৈজসপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি হয় এ মেলায়। প্রশাসনের কঠোরতায় জুয়া বা অশ্লীল আয়োজনের সুযোগ নেই। তবে মেলায় ইচ্ছামতো টোল আদায় ও কিছু অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন