পাবনার বেড়ায় মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মো. শাহানুর আলী। থোকায় থোকায় ধরা টমেটো যেন তার সাফল্য ও আত্মবিশ্বাসের গল্প বলছে। পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নে তেঁঘুরিয়া গ্রামের শাহানুর আলী ডিগ্রি পাসের পর চাকরি খুঁজে ব্যর্থ হন। এরপর মত পরিবর্তন করে বাণিজ্যিকভাবে ২০১১ সালে ২ বিঘা জমির ওপর মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। প্রথমে চড়াই-উতরাই পেরোতে হলেও বর্তমানে তিনি সফল চাষি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত হয়েছেন।
নতুন এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করার কথা শুনে বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও সৌখিন সবজি চাষি প্রতিদিন তার বাগান দেখতে আসছেন।
সরেজমিনে উপজেলার তেঁঘুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টমেটোর বাগানে সবুজের সমারোহ, সবুজ গাছে থোকায় থোকায় টমেটো। টমেটো ক্ষেতেই দেখা এবং কথা হয় শাহানুর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ডিগ্রি পাস করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি না পেয়ে নিজেই কিছু করার চেষ্টা করা থেকেই এই উদ্দ্যেগ নেই। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক সহায়তায় প্রোগ্রাম ফর পিপলস্ ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) কর্তৃক বাস্তবায়িত কৃষি ইউনিট প্রোগ্রামের আওতায় টমেটোর চারা পাই। এ নিয়ে দুই বিঘা জমির ওপরে আমার চাষের যাত্রা শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, এ সময় ওই সংস্থাটির নিজস্ব অর্থায়নের আমাকে একটি বীজ থেকে চারা তৈরির সেট তৈরি করে দেয়। এখন ২০২৪ সালে এসে আমার টমোটোসহ মরিচ, কয়েক ধরনের ক্যাপসিকাম, রুটবিট, স্ট্রবেরি চাষ বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ বিঘায় গিয়ে ঠেকেছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছরে ভালে চাষ হওয়ায় ১৪ বিঘা থেকে টমেটো, মরিচ, বেগুন প্রায় ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। চারা উৎপাদন ও বিপণনের কাজ করছি। প্রথম বছরেই চারা বিক্রি করে লাভ হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আমার এই প্রজেক্টে ৮ থেকে ১০ জন সব সময় কর্মরত থাকেন। মৌসুমে ২০ জনের বেশিও শ্রমিক লাগে। এদের অধিকাংশই শিক্ষিত বেকার যুবক।
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ প্রসঙ্গে বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর বলেন, মালচিং পেপার হলো বিশেষ ধরনের পলিপেপার (পলিথিন)। ফসলের ক্ষেতে আদ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষেতে পানি, সূর্যের তাপ বাতাসে উড়ে যায় না। ফলে জমিতে আর্দ্রতা থাকায় সেচ লাগে অনেক কম। মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ পদ্ধতি খুবই সুন্দর একটা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে জমিতে আগাছা হয় না বললেই চলে। মালচিং পেপারে কার্বন থাকার কারণে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সারের গুণাগুণ ঠিক থাকে ফলে ফলনও বৃদ্ধি পায়। একই মালচিং পেপার একাধিক সবজি ফসল চাষে ব্যবহার করা যায়। অন্যান্য সবজি ফসল যদি এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায় তাহলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবে।
তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে প্রথমে অর্থ খরচ বেশি হলেও সামগ্রিকভাবে লাভ ও অনেক বেশি হয়। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, প্রদর্শনীর জন্য উপজেলার কয়েকটি জায়গায় এই পদ্ধতিতে কিছু চাষাবাদ করা হয়েছে। আগামীতে উপজেলার সবজি চাষিদের উৎসাহিত করতে তাদের টমেটো চাষ মাঠ প্রদর্শনী করা হবে এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন