মানিকগঞ্জের শিবালয়ে গেল বুধবার (১৭ জানুয়ারি) পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের কাছে ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা চালাচ্ছিলেন তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী ২য় শ্রেণির মাস্টার মো. আঞ্জুমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার দিন রজনীগন্ধা ফেরির মাস্টার অফিসার মেহের আলী তার ৬ ঘণ্টা শিফট ডিউটি শেষ করে চলে যায়। পরের শিফটে ফেরি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছিলেন তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী দ্বিতীয় মাস্টার মো. আঞ্জুমান। কিন্তু নিয়মানুযায়ী ওই পদে থাকার কথা দ্বিতীয় শ্রেণির সনদধারী দ্বিতীয় মাস্টারের।
ডিজিশিপিং ইনল্যান্ড ইঞ্জিন ড্রাইভার ও ইনল্যান্ড ইঞ্জিন মাস্টারদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন এবং সনদপত্র, জাহাজের রেজিস্টেশন, সার্ভেসহ জাহাজের এম নং প্রদান করে থাকেন। হর্স পাওয়ার ভিত্তিতে ইঞ্জিন ড্রাইভার ও ইঞ্জিন মাস্টারদের সনদ প্রদান করা হয়। হর্স পাওয়ার ভিত্তিতে ১-২৫০ হর্স পাওয়ার তৃতীয় শ্রেণির সনদ, ২৫০-৬০০ হর্স পাওয়ার দ্বিতীয় শ্রেণির সনদ ও ৬০০-১৫০০ হর্স পাওয়ারে অধিকারীদের প্রথম শ্রেণির সনদ দেওয়া হয়।
হর্স পাওয়ার অনুসারে সনদ ও ড্রাইভার মাস্টারদের পদায়ন করে থাকে ডিজিশিপিং। ডিজি শিপিংয়ের নিয়মানুযায়ী প্রথম শ্রেণির সনদধারীরা যে কোনো ধরনের জাহাজ পরিচালনার করতে পারেন। দ্বিতীয় শ্রেণির সনদধারীরা প্রথম শ্রেণির মাস্টার ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে জাহাজ পরিচালনা করতে পারেন। তবে তৃতীয় শ্রেণির সনদধারীদের বড় ধরনের জাহাজ পরিচালনার অনুমতি নেই। তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী চালকরা অদক্ষ চালকের কোঠায়। এদের ফেরি পরিচালনার কোনো অনুমতি নেই।
অভিযোগ আছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিআইডব্লিউটিসি ওয়াকার্স ইউনিয়নের পাটুরিয়া ঘাট শাখার সাবেক সভাপতি গ্রিজার ফয়েজ আহামেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নাতিন জামাই মো. আঞ্জুমানকে দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টারের জায়গায় পদস্থ করে রজনীগন্ধা ফেরির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন।
এ ছাড়া তার ছেলে জুবুল হোসেন তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টার হয়েও জরুরি উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি ৮-৩৮৯ এর প্রথম শ্রেণির মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী জুবুল হোসেন বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির যন্ত্র চালকের স্থলে পদায়নে আছেন।
তা ছাড়া, ফয়েজের আরেক নাতি সদ্য তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়া ইমন হাসান, ইউলিটি ফেরি হাসনাহেনায় দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার হিসেবে যোগদানের অপেক্ষায় আছেন।
বর্তমানে ফয়েজ আহামেদের পরিবারের বড় ছেড়ে জুবায়ের হোসেন প্রান্তিক সহকারী, ছোট ছেলে জবরুল হোসেন তৃতীয় শ্রেণির যন্ত্রচালক, মেয়ের ঘরের নাতি ইমন হাসান, নব্যডিজি শিপিং হতে পাস করা তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার এবং ছেলের ঘরের মেয়ের নাতনি জামাই ফেরি রজনীগন্ধার দ্বিতীয় মাস্টার আঞ্জুমান হিসেবে পাটুরিয়া ঘাটে কর্মরত আছেন।
এ ছাড়াও পদ বাণিজ্যসহ বদলি ও চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে ওয়াকার্স ইউনিয়নের এই সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে।
তবে এ ব্যাপারে, রজনীগন্ধা তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী দ্বিতীয় মাস্টার মো. আঞ্জুমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি তাকে।
আর ফয়েজ আহামেদের মোবাইল নম্বর ০১৭৩১-৭১৩ ২২৩ এ যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোনটি রিসিভ না করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের ভাসমান কারখানা মধুমতির (এজিএম) মেরিন-১ আহামেদ আলী বলেন, ফেরি পরিচালনা করে থাকেন প্রথম শ্রেণির সনদধারী মাস্টার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী মাস্টারদের ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছি বলে ফোনটি কেটে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, সবাইকে নিয়ম মেনেই পদায়ন করা হয়। অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। তবে যদি কেউ এ রকম কিছু করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ছাড়াও তিনি চতুর্থ দিনের ফেরি উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে জানান, গতকাল প্রত্যয় এসে পৌঁছানোর পর থেকেই ফেরি উদ্ধারে মূল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আজকে দুটি রশি বাধার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রশি বাধা শেষ হলেই ফেরি পানি থেকে তোলার জন্য টান দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গেল বুধবার পাটুরিয়া ইউটিলিটি ফেরি ডোর দিন ২টি যানবাহন, দ্বিতীয় দিন ১টি, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন কোনো যানবাহনের সন্ধান না পাওয়ায় এ পর্যন্ত ৯টি ট্রাকের মধ্যে ২টি ট্রাক ও ১টি কভার্ডভ্যানসহ ঘটনার দিন ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এখনো নিখোঁজ ফেরির দ্বিতীয় যন্ত্রচালক হুমায়ুন কবির।
মন্তব্য করুন