ইতালি যাওয়ার প্রলোভনে দালালদের খপ্পরে পরে লিবিয়ায় বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন পার করছেন মো. সুজন হাওলাদার নামের এক যুবক। ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দালালচক্র তাকে ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়ার একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেরো লাখ টাকায় ইতালি নিয়ে যাবে এমন লোভনীয় অফারে দালাল চক্রের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় সুজন। প্রথম কিস্তিতে চুক্তির ১০ লাখ টাকাও দেয় সে। গত বছর ১০ জুলাই সুজনকে ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় চক্রটি। চুক্তির বাকি ৩ লাখ টাকা ইতালি যাওয়ার পরে দেওয়া হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার আলমস নামের একটি রেস্টুরেন্টে বসে এমন শর্তে লেনদেন করা হয়। পরে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই সুজনকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ২০ অক্টোবর লিবিয়ার একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে সুজনকে জীবিত ফিরে পেতে আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা।
এ বিষয়ে সুজনের শ্বশুর এমদাদ হোসেন পেদা বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ডেমরা থানায় অভিযুক্ত ৫ জন মানব পাচারকারীসহ অজ্ঞাত ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন- মাদারীপুরের কালকিনি থানার উত্তর উড়ার চর গ্রামের রাজ্জাক সরদারের ছেলে মো. এনামুল (৩২), একই জেলার সরদার আল মুবিন (৩০), ডাচ বাংলা ব্যাংক লি. এজেন্ট শাখার স্বত্বাধিকারী লিপি, বিকাশ নম্বরের স্বত্বাধিকারী ও মেসার্স কাপাসিয়া কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হাফেজ আব্দুল মোক্তার মোল্লা।
এ বিষয়ে সুজন হাওলাদারের শ্বশুর বলেন, আমার মেয়ের জামাতা মো. সুজন হাওলাদারকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা। তাদের সাথে আমরা সেভাবেই লেনদেন করেছি। পরে গত বছর ২০ অক্টোবর দুবাইগামী একটি বিমানে করে তাকে ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, সুজন ইতালি যায়নি। পরে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর আমার ইমো নাম্বারে ভিডিও কল করে দালাল চক্রের সরদার আল মুমিন। এ সময় সে জানায়, লিবিয়ায় সুমনকে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে জীবিত পেতে হলে আরও ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দিতে হবে, না হলে তারা সুমনকে মেরে ফেলবে। এ সময় তারা আমার মেয়ের জামাতাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের ভিডিও সরাসরি দেখায়। সুজনকে ফিরে পেতে তার পরিবারের লোকজন ওই দালাল চক্রকে আরও ১১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে পাঠালেও লিবিয়ার ওই চক্র থেকে তাকে মুক্ত করা যায়নি। মোট ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েও আমার মেয়ের জামাতাকে আজ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
বাদীর বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেমরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম দৈনিক কালবেলাকে বলেন, একই এলাকার বাসিন্দা লিবিয়া প্রবাসী মো. এনামুলের সঙ্গে ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন ভুক্তভোগী সুজন। পরে তারা সুজনকে লিবিয়ার মাফিয়া মানবপাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন