ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে প্রতিদিন জামালপুর থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ও নাসিরাবাদ নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। দীর্ঘদিনের পুরোনো ও সংস্কার না হওয়ায় রেলপথের ঈশ্বরগঞ্জ এলাকাটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলছে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
রেলপথের নানা ত্রুটি শনাক্ত করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি দপ্তর। আনসার সদস্যদের তৈরি জরিপে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অভ্যন্তরে রেলপথের স্লিপারে ৮ হাজার ক্লিপ, ফিসপ্লেটে নাট নেই ১৪২টি, ডগপিন নেই ১৫৮৭টি, স্লিপার নেই ১৬টি এবং ৬৯টি স্লিপার ভাঙা রয়েছে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে উপজেলাটির অভ্যন্তরের রেলপথকে ১২টি পয়েন্টে বিভাজন করে প্রতি দুই কিলোমিটার এলাকার জন্য আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়। ৬৮ জন সদস্য পালাক্রমে দিনে ও রাতে রেলপথের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় দেখা যায়, নানা স্থানে নেই স্লিপারের ক্লিপ, ফিসপ্লেটে নাট নেই, ডগপিন নেই ও স্লিপার নেই। বিষয়টি উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে জানানোর পর গত ১১ জানুয়ারি পুরো এলাকাটি শনাক্তে কাজ করে আনসার সদস্যরা।
উপজেলার ১২টি পয়েন্টে রেলপথের স্লিপারে ৮ হাজার ক্লিপ, ফিসপ্লেটে নাট নেই ১৪২টি, ডগপিন নেই ১ হাজার ৫৮৭টি, স্লিপার নেই ১৬টি এবং ৬৯টি স্লিপার ভাঙা পায়। প্রতিবেদনটি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা সুশান্ত মোদক ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশন অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
এরমধ্যে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শুরুর সীমানা শিমরাইল থেকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ৪৩৭টি, ডগপিন নেই ৩২৩টি, স্লিপার ভাঙা ২২টি, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম থেকে ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ৩২২টি, ফ্লিসপ্লেটে নাট নেই ৫টি, ডগপিন নেই ৯০টি, স্লিপার ভাঙা ৭টি, ঈশ্বরগঞ্জ স্টেশন থেকে নয়শিমুল মোড় পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ৩৩০টি, ফ্লিসপ্লেটে নাট নেই ২৪টি, ডগপিন নেই ১১৫টি, স্লিপার নেই ৪টি, নয়শিমুল মোড় থেকে হাটুলিয়া রেলব্রিজ পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ২৫৫টি, ফিসপ্লেটে নাট নেই ৩৫টি, ডগপিন নেই ১৬৮টি, স্লিপার নেই ৩টি, হাটুলিয়া রেলব্রিজ থেকে সোহাগী স্টেশন পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ৮২০টি, ফিসপ্লেটে নাট নেই ৩১টি, ডগপিন নেই ২৯৫টি, স্লিপার ভাঙা ৭টি, সোহাগী রেলস্টেশন থেকে বৈরাটি স্কুল পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ২৮৬টি, ফিসপ্লেটে নাট নেই ৯টি, ডগপিন নেই ১৬৭টি, স্লিপার ভাঙা ৫টি, বৈরাটি স্কুল থেকে মহেশপুর পাকারাস্তা রেলক্রসিং পর্যন্ত স্লিপারে কিপ নেই ৫৮২টি, ফিসপ্লেটে নাট নেই ১০টি, ডগপিন নেই ১২টি, স্লিপার নেই একটি, স্লিপার ভাঙা ১৩টি, মহেশপুর পাকারাস্তা রেলক্রসিং থেকে মৃগালী পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ৮৯২টি, ফিসপ্লেটে নাট নেই ১৮টি, ডগপিন নেই ২০টি, স্লিপার নেই ৩টি, স্লিপার ভাঙা ১৫টি, মৃগালী থেকে আঠারবাড়ি সরকারবাড়ি পর্যন্ত স্লিপারে কিপ নেই ৯৯৪টি, ফিসপ্লেটে নাট নেই ৭টি, ডগপিন নেই ২০টি। সরকারবাড়ি থেকে আঠারবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ১২৭৮টি, ডগপিন নেই ১৩৭টি, স্লিপার নেই ৫টি, আঠারবাড়ি স্টেশন থেকে উত্তর বনগাঁও রেলপয়েন্ট পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই ১০৫০টি, ফ্লিসপ্লেটে নাট নেই ৩টি, ডগপিন নেই ১০৯টি ও উত্তর বনগাঁও থেকে কাদির হাওর রেলপয়েন্ট পর্যন্ত স্লিপারে ক্লিপ নেই।
রেলপথটি ধরে বতর্মানে বিজয় এক্সপ্রেস ও নাসিরাবাদ নামে দুটি ট্রেন চলাচল করলেও আগে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ঈশাখাঁ এক্সপ্রেস ও ময়মনসিংহ থেকে ভৈরবগামী দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করত। করোনাকালীন সময়ে ট্রেনগুলো বন্ধ হওয়ার পর আর চালু হয়নি।
সোহাগী এলাকায় দায়িত্বে থাকা আনসার দলনেতা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্টেশন এলাকায় স্লিপার ভেঙে দেবে যাওয়ায় ট্রেন চলার সময় ঝাঁকুনি খায়। বিভিন্ন স্থানে নেই ক্লিপ, নাট। এগুলো রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। আমরা দায়িত্ব পালনের আগে থেকে এগুলোর এই অবস্থা।
সোহাগী স্টেশনের রেললাইনের পাশে মাটি পরীক্ষা করতে দেখা যায় একটি দলকে। সেটির প্রকৌশলী জুনাইদ হাসান বলেন, রেলপথটি ডাবল লাইন স্থাপনের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। গত কিছুদিন ধরেই তারা ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে মাটি পরীক্ষার কাজ করছেন।
রেলওয়ের ট্রাফিক সেকশনের সাবেক পয়েন্টস ম্যান আক্তার হোসেন বলেন, লাইনটি অন্তত ৮ বছর আগে মেরামত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না হওয়ায় অনেক স্থানে জরাজীর্ণ অবস্থা রয়েছে। অনেক ক্লিপ খুলে নিয়ে গেছে, নাট খুলে নিয়ে গেছে। লাইনটি মেরামত করা দরকার।
উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা সুশান্ত মোদক বলেন, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় আমাদের ওপর বর্তাতে পারে। তাই রেলপথের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আনসার সদস্যদের তৈরি প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে। লাইনের বিভিন্ন জায়গায় ক্লিপ, স্লিপার ও অন্যান্য জিনিস না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে। এগুলো সংস্কার করা হলে ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে।
রেলওয়ে ময়মনসিংহের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আকরাম আলী বলেন, লাইনগুলো অনেক পুরোনো। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি লাইনগুলো মেরামত করে ভালো করার জন্য। কিন্তু এটি একদিনে ভালো করা সম্ভব নয়। আমরা কারিগরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাভিক রেখেছি। তারপরেও যে দুর্ঘটনা ঘটবে না তা নয়।
তিনি আরও বলেন, স্লিপারের ক্লিপ গুলো যেন চুরি না হয় সে জন্য ওয়েল্ডিং করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রেলপথেও এ কাজ করা হবে।
মন্তব্য করুন