রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে জেলার বরকল উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের নামে চার প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জেলা পরিষদ সদস্যসহ ৯ জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রাঙামাটির দুদকের সহকারী পরিচালক ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ১, নির্বাহী প্রকৌশলী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী, দুজন সহকারী প্রকৌশলী এবং একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার ১ নম্বর এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের কামিনি চাকমা জমির ওপর মৎস্য বাঁধ ও পাকা সেচ ড্রেইন নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়। ৪৮ মিটারের এই বাঁধটি নির্মাণের জন্য ২০ লাখ ও ১৯২ মিটার দৈর্ঘ্যর পাকা ড্রেইন নির্মাণের জন্য ১০ লাখসহ মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তদন্তে দুটি প্রকল্পে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ দশমিক ৮৫ টাকা আত্মাসাৎ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এই কাজে সংশ্লিষ্ট রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, মেসার্স সমৃদ্ধি এন্টারপ্রাইজের প্রো. ঠিকাদার মিলন তালুকদারের নামে মামলা করা হয়।
২ নম্বর এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বরকল উপজেলার সুবলং বাজারে পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণ গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়। প্রকল্পের ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মাসাৎ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্তে ওই স্থানে কোনো নলকূপ পাওয়া যায়নি। ফলে ওই কাজের সঙ্গে জড়িত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার মেসার্স নাংচিং এন্টারপ্রাইজ চিংহেন রাখাইন ও জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমার নামে মামলা করা হয়।
৩ নম্বর এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বরকল উপজেলায় সুবলং ইউনিয়নে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিঁড়ি নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়। প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ লাখ টাকা। তদন্তে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিঁড়ি নির্মাণ প্রকল্পটি অস্তিত্বহীন ভূয়া প্রকল্প হিসেবে প্রমাণিত হয়। এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা প্রো. মেসার্স অমলেন্দু চাকমা ও সবির কুমার চাকমার নামে মামলা করা হয়। মামলার ৪ নম্বর এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বরকল উপজেলাধীন পূর্ব এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ থেকে হারুন টিলা এলাকার আহাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার নামে প্রকল্প ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গৃহীত হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ টাকা। তদন্তে ওই স্থানে কোনো মৎস্য বাঁধ এবং হারুন টিলা নামের কোনো জায়গাও পাওয়া যায়নি। তদন্তে এটি অস্তিত্বহীন ও ভুয়া প্রকল্প ছিল। এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার চিংহেন রাখাইন, ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা।
রাঙামাটির দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহিদ কামাল বলেন, ‘আজ এজাহার পেয়েছি। এজাহার মূলে আবারও তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।’
মন্তব্য করুন