সেচ মৌসুমে অকেজো পড়ে আছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের 'রাবার ড্যাম'। পানি ধরে রাখতে না পারায় উপজেলার সনমান্দি, সাদিপুর ও নোয়াগাঁও এই তিনটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষি জমির ইরি ও বোরো ধান চাষের সেচ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের অলিপুরা বাজারের পাশে ব্রম্মপুত্র নদের উপর ২০০৪ সালে ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৮ মিটার উচু রাবার ড্যামটি স্থাপন করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) অধীনে এই রাবার ড্যাম এবং এর পাশে ১৪৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থ্যের একটি সেতু নির্মাণ করতে সরকারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
রাবার ড্যামটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত উপজেলার সনমান্দি, সাদিপুর ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৩৫ টি মৌজার ২ হাজার ৪ শত হেক্টর ইরি, বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার জন্য। সে সময় মন্ত্রণালয়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও স্থানীয় কৃষকেরা প্রায় ১৬ বছর ধরে সেচ ব্যবস্থার কোনো সুফল পাচ্ছে না। ফলে বোরো ধান, রবিশস্যসহ চৈতালি ফসলে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার হাজারো কৃষক। এতে বাধ্য হয়ে নলকূপের পানি দিয়ে আবাদ করায় গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। কৃষি কাজে সেচের খরচ কমাতে ড্যামটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাবার ড্যামটি দেখাশোনার জন্য এর সুবিধাভোগী মানুষের মধ্য থেকে একটি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। এই সমিতির দায়িত্ব হচ্ছে রাবার ড্যামটির দেখভাল করা, প্রতি বছর ড্যাম ফুলিয়ে পানি আটকে রাখা এবং ওই পানি ধান চাষে সেচের কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করা। কিন্তু সমিতির সদস্যরা সরকারের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। শুধু তাই নয়, তারা ওই সমিতির নাম ভাঙিয়ে অলিপুরা এলাকায় সরকারি যায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
স্থানীয় অলিপুরা বাজার এলাকার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৬ বছর ধরে এ রাবার ড্যাম নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে আমাদের এ অঞ্চলের কৃষকদের বোরো ধান, রবি ও চৈতালি ফসলে সেচের জন্য নদীর পানি ধরে রাখা বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু কলকারখানার বর্জ্য এ নদীর পানির সাথে মিশে পানি দূষিত হওয়ায় এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জমিতে সেচ দিতে বাড়তি খরচ করতে হয়। যদি নদীর পানি পরিশুদ্ধ এবং অকেজো রাবার ড্যামটি মেরামত করা হয় তাহলে ফসল উৎপাদনে সেচ ব্যবস্থায় খরচ তুলনামূলকভাবে কমে যাবে।
সুবিধাভোগী কৃষকেরা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচে ফসল উৎপাদনে অনেক খরচ। তাই রাবার ড্যাম চালু থাকলে অনেক কম খরচে নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে পারতাম।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ফরহাদ জামান বলেন, রাবার ড্যামটি চালু হওয়ার পর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক তাদের ইরি, বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে এই পানি ব্যবহার করতেন। সেচ মৌসুমে পানি পেতে যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শুস্ক মৌসুম শুরুর আগে ড্যামটিতে পানি আটকে রাখা যাচ্ছেনা। রাবার ড্যামটি এখন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এটি মেরামতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। রাবার ড্যামটি পুণরায় সংস্কার করা হলে ওই এলাকার কৃষকরা জমিগুলোতে আবাদ করতে পারবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক লাভবান হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী আরজুরুল হক বলেন, এটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু নদীর পানির স্থানীয় কলকারখানার বর্জ্য পদার্থের কারনে দূষিত হয়ে গেছে। এর ফলে এ নদীর পানি প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। সে দিকটি বিবেচনা করেই আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
মন্তব্য করুন