কুমিল্লার চান্দিনায় মাদক সেবন ও বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় মো. হাছান (২০) নামে এক গ্রাম পুলিশকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত গ্রাম পুলিশ হাছান বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫ জনের বিরুদ্ধে চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় জাহাঙ্গীর নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চান্দিনা থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারি দুপুরে শুহিলপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মো. সুলতানের নেতৃত্বে ৪-৫ জন মাদকসেবী গ্রাম পুলিশ হাছানকে চড়-থাপ্পড় মারে। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৩ জানুয়ারি রাতে পরিষদের পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশ হাছানকে মারতে পরিষদে আসে। হাছান পরিষদের এক রুমে লুকিয়ে পড়লে তারা পরিষদের দরজায় লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয় মাদকসেবীরা। পরে ২৫ জানুয়ারি বিকেলে পরিষদের পতাকা নামানোর সময় মাদকসেবীরা সংঘবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঠা নিয়ে গ্রাম পুলিশ হাছানের ওপর হামলা করে। এলোপাতাড়ি মারধর ও গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় মাদকসেবীরা হাছানের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে ফেলে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
আহত গ্রাম পুলিশ হাছান বলেন, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক বেচাকেনাসহ সেবন করে আসছে। মাদক নির্মূলের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান সহায়তায় আমরা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ নিবারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাবেক মেম্বার সুলতানের নেতৃত্বে এলাকায় দিনে দুপুরে ও রাতে নির্বিকারে মাদক ব্যবসা চলছে। তারা ইউনিয়ন পরিষদে ঢুকেও মাদক সেবন করে, তাতে বাধা দিতে গেলে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আসত।অপরদিকে থানা পুলিশ কি কারণে সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম সরকারের ভাই নাছিরকে ধরে নিয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। পুলিশকে তথ্য দিয়ে নাছিরকে আমি ধরিয়েছি সন্দেহ করে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে বুকের বাম পাজরের হাড় ভেঙে ফেলেছে। আমি এ ঘটনায় জড়িত সকলের বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক মেম্বার সুলতান মুঠোফোনে জানান, এই ঘটনার সাথে আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ জড়িত নই। ঘটনার সময় আমি ইলিয়টগঞ্জ বাজারে ছিলাম। শুনেছি ওই গ্রাম পুলিশকে মারতে কয়েকজন দৌড়ে গিয়েছিল স্থানীয়দের বাধায় মারতে পারেনি। আপনার নেতৃত্বে এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবন চলছে এমন অভিযোগ প্রশ্নে তিনি বলেন- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি মাদকের সাথে কোনোভাবেই জড়িত নই। আমি মাদকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিক মুঠোফোনে জানান, আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং সঙ্গে সঙ্গে থানায় অবহিত করেছি। আহত গ্রাম পুলিশ হাছানকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে যাই। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলাও হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন যাবত মাদকের সাথে জড়িত, তাদের কে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় অভিযুক্তরা আমাকেও বিভিন্ন সময় গালাগালসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাতে পারব কিনা সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
চান্দিনা থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ মুঠোফোনে জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। জাহাঙ্গীর নামে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন