ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আছে হাসপাতাল ভবন, নেই সেবা

নবনির্মিত ঝালকাঠি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। ছবি : কালবেলা
নবনির্মিত ঝালকাঠি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। ছবি : কালবেলা

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল চত্বরে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার ৯ তলা ভবনের হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর ২৫০ শয্যার ৯ তলা ভবনের হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ।

হাসপাতালটির উদ্বোধন হলেও পুরোপুরি শুরু হয়নি চিকিৎসাসেবা। জরুরি কোনো রোগী বা চিকিৎসাসেবা নিতে যেতে হচ্ছে বিভাগীয় শহর বরিশালে। এতে বিপাকে পড়েছে সেবা নিতে আসা সাধারণ চিকিৎসা প্রার্থীরা। সাড়ে পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালটির অবকাঠামোর কাজ চলছে। আগামী জুনের মধ্যে ভবনটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ধীরগতিতে নির্মাণকাজ চলায় আধুনিক চিকিৎসাসেবা পেতে জেলাবাসীকে আরও দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। শুরু থেকেই ধীরগতিতে নির্মাণকাজ চলায় এবং করোনা, করোনাকালীন শ্রমিক সংকটসহ নানা অজুহাতে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ সেবা গ্রহীতারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, এই হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় করোনা মহামারির সময়। তখন নির্মাণসামগ্রীর দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। করোনাকালে শ্রমিক সংকটও ছিল বেশ। এ কারণে কাজের গতি ছিল কম।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। একইসঙ্গে সেবা কার্যক্রম চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।

হাসপাতাল নির্মাণের কার্যাদেশ অনুযায়ী ১৮ মাসে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রেখে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার ঝালকাঠি সদর হাপাতালের ১১ তলা ফাউন্ডেশনের ৯ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী দেড় বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো অসম্পূর্ণ। পরে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও চার বছরের মাথায় পুরো কাজ শেষ করতে পারেনি কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জিএম কনস্ট্রাকশন নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন হলেও চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা। এখনো হাসপাতালটির নির্মাণকাজ চলছে। চিকিৎসাসেবার উন্নত যন্ত্রপাতির কিছুই স্থাপন হয়নি। এখনো স্থাপন করা হয়নি আইসোলেশন ইউনিট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও লিফট। ভেতরের দরজা, জানালা, ইলেকট্রিক, পানির লাইন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের অধিকাংশই বাকি। ফলে জলদি করে উদ্বোধন হলেও কোনো উপকারে আসছে না এই হাসপাতাল থেকে।

২০১৮ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন শিল্প মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু ১০০ শয্যা সদর হাসপাতাল চত্বরে ২৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির আওতায় জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা হতে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগ। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হলে জেলার আট লাখ মানুষ এখান থেকে আধুনিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবে।

ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দে প্রাথমিকভাবে ৯ তলা এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জি এম কনস্ট্রাকশন। মূল নকশায় ১১ তলা এ ভবনের ৭ম, ৮ম ও ৯ম তলার কাজের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭০ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার টাকা করা হয়। লিফটসহ আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে এ হাসপাতালটিতে।

হাসপাতালের প্রথম তলায় বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য চিকিৎসকদের চেম্বার ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাব থাকবে। ৭ম ও ৮ম তলায় থাকবে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিন। ৯ম তলায় থাকবে আইসোলেশন ওয়ার্ড, কিডনি ডায়ালাইসিস কক্ষ, অপারেশন থিয়েটারসহ প্রশাসনিক অফিস।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কামাল উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের পুরো কাজ শেষ না হওয়াতে দুর্ভোগ হচ্ছে। এখানে ভালো ডাক্তারের সংখ্যা কম। ভালো চিকিৎসা নিতে যেতে হয় বরিশালে।

ঝালকাঠির সামাজিক সংগঠন ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির (ইয়াস) সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা বলেন, আমি আম্মুর পায়ের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাই। ডাক্তার দেখানোর পরে কিছু টেস্ট দেওয়া হয়। ভেবেছিলাম আম্মুর ট্রিটমেন্টের সব টেস্ট এখানেই পাব। টেস্ট করাতে গিয়ে জানলাম, ব্লাডবিষয়ক টেস্ট ছাড়া এক্স-রে বন্ধ আছে। শেষে বাধ্য হয়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করতে হয়েছে। নতুন ভবনটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করলে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষকে সামান্য বা জটিল রোগেও বরিশাল যেতে হবে না। সেই আশা রেখে এই হাসপাতালে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তারদের নিয়োগ ও উন্নত চিকিৎসার সব যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের দাবি জানাই।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতির মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজে বিলম্ব হয়েছে। আগামী জুন মাসে হাসপাতালটিতে সেবা কার্যক্রম চালু হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল

ভূমিকম্প আতঙ্ক : জবিতে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ

পদ্মার চর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৭৮

যেসব সূক্ষ্ম লক্ষণে বুঝবেন শরীরে হয়েছে পুষ্টির ঘাটতি

সড়কে প্রাণ গেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের

জামায়াতের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না : ফারুক

গ্যাস সরবরাহ বন্ধ আছে যেসব এলাকায়

মোবাইলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফাইনাল দেখবেন যেভাবে

মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে : এ্যানি

১০

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল নারী চিকিৎসকের

১১

৫টার মধ্যে ঢাবির হল খালির নির্দেশ

১২

শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে শিক্ষার পরিবেশ আনন্দদায়ক হতে হবে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৩

রাতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

১৪

থানা ব্যারাকে এএসআইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৫

ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

১৬

প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে-বসবে গ্রেপ্তার করবে : শাহজাহান চৌধুরী

১৭

মারা গেলেন বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম

১৮

আপনি কি জানেন, কেন তালার নিচে ছোট্ট ছিদ্র থাকে?

১৯

কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের আকস্মিক মৃত্যু

২০
X