নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্ত্রী ও ২ মেয়েকে হত্যার পর ব্যবসায়ীর আত্মহত্যাচেষ্টা 

আশিকুর রহমান বাবু মোল্লার বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। ছবি : কালবেলা
আশিকুর রহমান বাবু মোল্লার বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। ছবি : কালবেলা

নীলফামারীতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর গলাকেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এক ব্যবসায়ী।

শুক্রবার (২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী পুরাতন বন্দর বাজার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বাবু মোল্লার (৪০) স্ত্রী তহুরা বেগম (৩৫), তাদের দুই শিশু মেয়ে আয়েশা আক্তার তানিয়া (১১) ও জারিন (৬)।

আশিকুর রহমান চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লার ছেলে। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দারোয়ানী পুরাতন বন্দর বাজার গ্রামের নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। বাড়ির সাথেই ‘স’ মিলসহ তামাক, পাট ও রসুনের ব্যবসা করতেন আশিকুর।

স্থানীয়রা জানান, সকালে বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে আশিকুরকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে যান প্রতিবেশী গৃহবধূ বিউটি বেগম। এ সময় তাকে গলাকাটা অবস্থায় দেখতে পেয়ে বিউটি বেগমের চিৎকারে অন্যান্য প্রতিবেশীসহ বাজারের লোকজন ছুটে আসেন। বাড়ির ভেতরে গিয়ে আশিকুরের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা।

আশিকুরকে উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে পুলিশ এসে নিহত তহুরা বেগম এবং তার দুই শিশু মেয়ে আয়েশা আক্তার তানিয়া ও জারিনের মরদেহ উদ্ধার করে।

প্রত্যক্ষদর্শী বিউটি বেগম (৩২) বলেন, ‘আশিকুর ভাইদের বাড়ি পার হয়ে সকালে কাপড় শুকাতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে দেখি আশিকুর ভাই পড়ে আছে। আমি দৌড়ে গিয়ে বাড়ির ভেতরে গিয়ে ভাবী ও তার বাচ্চাদের ডাকাডাকি করি। কিন্তু তাদের কোনো সারাশব্দ না পাওয়ায় বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে রক্ত দেখতে পাই। এরপর দেখি আশিকুর ভাইয়ের গলা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। এ সময় আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এসে আশিকুর ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং বাড়ির থাকার ঘরের বিছানায় তহুরা ভাবী ও তার দুই মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।’

আশিকুরের ছোট বোন সাথী আক্তার (২৭) জানান, আশিকুর ভাইয়া দীর্ঘ ছয় মাস ধরে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে আমি প্রতি সপ্তাহে এসে ভাইয়ার খোঁজখবর নিয়ে যেতাম। গতকাল বৃহস্পতিবার ভাবীর সাথে আমার কথা হয়েছিল, ভাবী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কখন আসবে। আমি ভাবীকে বলেছিলাম শুক্রবার সকালে যাব। এই বলে কথা শেষ করেছি ভাবীর সাথে।

আজ (শুক্রবার) সকালে মোবাইল ফোনে খবর পাই ভাবী ও আমার দুই ভাতিজি বেঁচে নেই, ভাইয়াকে গলাকাটা অবস্থায় রংপুরে নেওয়া হয়েছে। এরপর এখানে এসে লোকজনের কাছে শুনি যে, ভাবী ও তার দুই মেয়েকে হত্যা করে গলাকেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ভাইয়া। কি কারণে এবং কেন এমন ঘটনা ঘটল তার কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।’

আশিকুরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘সকালে আমাকে একজন ফোন দিয়ে জানায় আশিকুর ভাই অসুস্থ্। খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি চলে আসি। এসে দেখি ভাইকে ভ্যানে উঠানো হচ্ছে। এ সময় তার গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে। আমাদের আরেক চাচাতো ভাইকে সাথে দিয়ে তাকে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর সেখান থেকে রংপুরে পাঠানো হয়। এরপর ভাবী ও তাদের দুই মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে ঘরে গিয়ে দেখি বিছানায় মৃত অবস্থায় তারা পড়ে রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, আশিকুর ভাই ‘স’ মিলের ব্যবসার পাশাপাশি রসুন, পাট, তামাক এর স্টক ব্যবসা করতেন। এবার তিনি রসুন, পাট ও তামাক ক্রয় করে ব্যবসায় প্রচুর টাকা লস করেছেন। ব্যবসায় আর্থিক লসের পাশাপাশি ব্যাংকে ঋণ ছিল তার। পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি অসুস্থতার কারণে তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে নিশ্চিত করেছিলাম যে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আমরা অর্থের সংস্থান করে তার সকল সমস্যা সমাধান করব। এরই মধ্যে এমন অঘটন ঘটাল আমাদের ভাই।’

এদিকে নিহত তহুরা বেগমের বাবা আব্দুল আলীম জানান, ‘গতকাল এশার নামাজের পর মেয়ের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল। জামাই আগের থেকে একটু সুস্থ্ আছে, নাতনিরাও ভালো আছে বলে জানিয়েছিল আমার মেয়ে তহুরা। এরপর আজ সকালে ফোনে খবর পাই আমার মেয়ে তহুরাকে এবং তার দুই মেয়েকে মেরে ফেলে নিজের গলাকেটে মরার চেষ্টা করেছে জামাই আশিকুর রহমান।’

নীলফামারী সদর থানার ওসি মো. তানভিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূ তহুরা বেগম এবং তার দুই শিশু মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে কিনা সেটি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। অপরদিকে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী আশিকুর মোল্লা বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ও সিআইডি পুলিশ কাজ করছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জয়ের পরও শান্তর মুখে হতাশা

ঘুষ ছাড়া ফাইল ছাড়েন না কর্মকর্তা, রাজশাহী মাউশি কার্যালয়ে দুদক

জিআই স্বীকৃতি পেল নরসিংদীর লটকন

মুসলিম ছাত্রকে পাকিস্তানের পতাকায় মূত্রত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ ভারতে

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে ‘কড়া হুঁশিয়ারি’ ভারতের

মে মাসে পুড়তে পারে দেশ

ভাঙা হলো ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ মঞ্চ

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময় 

সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট আর জয়, মিরাজের ধন্যবাদ পেলেন যারা

সূর্যের তাপে পুড়ছে পাকিস্তান

১০

রাজনৈতিক মতৈক্যে করিডরের সিদ্ধান্ত নিন, সরকারকে সমমনা জোট

১১

ঈদের আগেই বাজারে আসছে নতুন নোট, যা থাকছে নকশায়

১২

মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাবি অ্যালামনাই

১৩

পদোন্নতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি

১৪

সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া সেই অধ্যক্ষকে কেন্দ্র সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি

১৫

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া করিডর নয় : শেখ বাবলু

১৬

ইবিতে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের নিন্দা

১৭

ইসরায়েলি গুপ্তচর সন্দেহে ইরানে এক জনের ফাঁসি কার্যকর

১৮

তীব্র তাপদাহের সঙ্গে মে মাসে কালবৈশাখী-ঘূর্ণিঝড়ের আভাস

১৯

ফ্যাসিস্ট আমলে হাজার হাজার শ্রমিককে পথে বসানো হয়েছে : রিজভী

২০
X