নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৫ এএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

খুর-কাঁচি হাতে ফুটপাতেই ৪০ বছর

বাজারের পাশে খোলা জায়গায় নরসুন্দরের কাজ করছেন বাবুল সরকার। ছবি : কালবেলা
বাজারের পাশে খোলা জায়গায় নরসুন্দরের কাজ করছেন বাবুল সরকার। ছবি : কালবেলা

চারদিকে ফাঁকা, নেই দামি কোনো চেয়ার-টেবিল, নেই কোনো আয়না আধুনিক সরঞ্জাম। হাতে আছে শুধু খুর আর কাঁচি। আর এভাবেই ৪০ বছর ধরে করছেন নরসুন্দরের কাজ। অনেক আগেই পরিচিতি লাভ করেছেন গরীবের নরসুন্দর (নাপিত) হিসেবে।

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের খরাপ গ্রামে বাবুল সরকারের (৫২) বাড়ি। ১২ বছর বয়স থেকেই দারিদ্র্যতার জন্য বেছে নিয়েছিলেন নরসুন্দরের কাজ। মানুষের চুল, দাড়ি কেটে দেওয়ায় তার একমাত্র পেশা। প্রথম দিকে অন্যের সেলুনে চুল কাটার কাজ করতেন বাবুল সরকার। সে সময় মাসে বেতন পেতেন ১৫ টাকা। পরে নিজেই শুরু করেন এই পেশা। প্রায় ৫০ বছর পার করেছেন এই পেশায়।

ফুটপাতেই ৪০ বছর ধরে মানুষের চুল, দাড়ি কাটার কাজ করছেন তিনি। আর এই কাজ করেই বিয়ে দিয়েছেন ৩ কন্যাসন্তানকে। ১৯৭১ সালে বাবুল সরকার যুদ্ধের কারণে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। যুদ্ধ শেষ হলে আবার ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপরে পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে কিশোর বয়সেই নেমে পড়েন বাস্তবতার জগতে।

মাসে একবার প্রায় সবাইকে যেতে হয় সেলুনে চুল, দাড়ি কেটে নেওয়ার জন্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকার ভেদে চুল, দাড়ি কাটতে সেলুনে সর্বনিম্ন খরচ হয় একশ থেকে দেড়শ টাকা। সেখানে এখনো ৩০ টাকায় চুল এবং ২০ টাকায় দাড়ি কেটে নেওয়া যায় বাবুল সরকারের কাছ থেকে। সাপ্তাহিক বিভিন্ন বাজারগুলোতে একটা মোড়া আর চেয়ার পেতেই কার্যক্রম চালান বাবুল সরকার। বর্তমানে দিন শেষে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন তিনি।

বাবুল সরকার বলেন, একসময় নামিদামি সেলুন গ্রাম পর্যায়ে ছিল না। সে সময় খুব সকালে বিভিন্ন সাপ্তাহিক বাজারগুলোতে যেতেন নিজের নরসুন্দরের কাজ করতে। তখন দুপুরের খাবারের সময় পেতেন না বাবুল সরকার। কাজের চাপে কোনো কোনো দিন রাতে বাসায় গিয়েই খাবার খেতে হতো। তবে সেই সময়ে আয় রোজগারও ভালো হতো। পরিবার নিয়ে সুখে ছিলেন। কিন্তু বর্তমান ভাটা পড়েছে তার ব্যবসায়। ফলে অনেক সময় পরিবারের খরচ মেটাতে পড়তে হয় বিপাকে।

তিনি জানান, ফুটপাতেই দীর্ঘ ৪০ বছর খুর এবং কাঁচি নিয়ে এ কাজ করছেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর আগেও এই বাজারে কাজের চাপে দম ফেলার সময় পেতেন না তিনি। কিন্তু এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো কোনো সপ্তাহে ইজারাদারের খাজনা পর্যন্ত দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। দিন শেষে কয়েকবার শূন্য পকেট নিয়েই বাসায় ফিরেছেন তিনি।

ওই বাজারের ইজারাদারের সদস্য লতিফর রহমান জানান, একসময় বাবুল সরকার অনেক সকালে আসত। এখানে কোনো হোটেল দুপুরের খাবার কিনে খেত সে। তার ইনকাম তখন ভালো হতো। কিন্তু এখন আগের মতো ইনকাম হয় না। কোনো কোনো দিন আমাদের খাজনাও দিতে পারে না সে। তাই আমরাও জোর করি না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নগদে আতিক মোর্শেদের স্ত্রীর নিয়োগে অনিয়ম পাওয়া গেছে

ঈদের আগে সুখবর পাচ্ছেন পৌনে চার লাখ শিক্ষক-কর্মচারী 

চতুর্থ বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ এর পর্দা নামল

আরও ৫টি দৃষ্টিনন্দন প্রাথমিক স্কুল পেল রাজধানীবাসী

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গোলাম কুদ্দুসসহ ৮ জনের ১৪১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

আসন্ন বাজেটে আয়করের নিম্নসীমা ৫ লাখ টাকা করা হোক

সাবেক মন্ত্রীর পালানোর বর্ণনা দিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার স্ট্যাটাস

স্ত্রী-ভাইসহ সাবেক এমপি ইকবাল হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মারা সেই জামায়াত কর্মী গ্রেপ্তার

‘সমবেত কণ্ঠে চির বিদ্রোহী নজরুল’

১০

প্রেমিকের ৪০ কোটি টাকা নিয়ে অন্যজনের সঙ্গে পালালেন প্রেমিকা

১১

মাতারবাড়ি প্রজেক্টে বড় বিনিয়োগ করবে জাপান : প্রেস সচিব

১২

বাবা হয়েছেন পরমব্রত

১৩

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে তো বাংলাদেশ?

১৪

সোমবার যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না

১৫

গাজীপুরে পানি পান করে কারখানাযর অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ

১৬

সব বিভাগে হতে পারে ভারি বৃষ্টি

১৭

সাবরেজিস্ট্রার বদলির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তা জারি

১৮

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিন : সেলিমা রহমান

১৯

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

২০
X