শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালিনগর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মো. দলিল উদ্দিন খান। চার ছেলেকে নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে গড়ে তুলেছেন বলসুন্দর, আপেল ও থাই জাতের বরইয়ের বাগান। ফলনও বেশ ভালো। বিভিন্ন প্রজাতির বরইয়ের বাম্পার ফলনে ব্যাপক আশাবাদী ছিলেন কৃষক দলিল উদ্দিন ও তার সন্তানরা। আর কিছুদিন বাদেই ফল সংগ্রহ করে করা হবে বাজারজাত। এরই মধ্যে ঘটে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মুহূর্তেই কৃষকের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
গত রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়া হয় দলিল উদ্দিন খান ও তার পরিবারের। প্রতিবেশীরা দলিল উদ্দিন ও তার চার ছেলেসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিলে তারা এলাকা থেকে পালিয়ে থাকেন। এ সময় তারা তাদের বাগান পাহারা দিতে পারেননি। এ সুযোগে গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে একদল দুর্বৃত্ত তাদের বাগান থেকে বরই, মাল্টাসহ প্রায় ১১ থেকে ১২ লাখ টাকার ফল চুরি করে নিয়ে যায়। এমনকি ডালপালা ভেঙে নষ্ট করে রেখে যায় পুরো বাগান।
জানা গেছে, গত বছর একটি বাগান থেকেই ১৮ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেন কৃষক মো. দলিল উদ্দিন খান। গত বছর লাভের মুখ দেখায় এ বছর নতুন করে আরও একটি বাগানে বরই চাষ করেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রিও করেছেন এ কৃষক। আগামী কয়েক দিনে আরও প্রায় ১০ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা ছিল তার। কিন্তু চুরির কারণে আজ তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
কৃষক দলিল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমি আর আমার চার ছেলে মিলে রাত দিন কষ্ট করে জায়গা-জমি বিক্রি করে এ ফলের বাগান করি। প্রথম বছর লাভের মুখ দেখে এ বছর আরও একটি নতুন বাগান করি। আল্লাহর রহমতে ফলনও হয়েছিল বেশ। কিন্তু শত্রুতা করে একটি চক্র আমার বাগানের ফলগুলো লুটে নিয়ে যায়। তারা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমি সরকারের কাছে এ লুটপাটকারীদের বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।
দলিল উদ্দিনের বড় ছেলে ছোলায়মান খান বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে এবং ওষুধের দোকানে বাকি করে তিলে তিলে এ বাগান করেছি। মাত্র দুই রাতে আমার বাগানের প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ মন বরই-মাল্টা লুট করে নিয়ে যায়। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। আমি এ ক্ষতি কি দিয়ে পূরণ করব। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।
সোলায়মান খানের ভাই কৃষক মো. বশির খান বলেন, আমাদের প্রতিটি গাছে বরই ছাড়া পাতার দেখা মেলেনি। কিন্তু গত দুই রাতের লুটের কারণে বেশির ভাগ গাছে পাতাই দেখা যায়। তা ছাড়া অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে রেখে যায়। আমরা লাখ লাখ টাকা ধারকর্জ করে এ বাগান করেছি। এখন এ ধারকর্জ কি করে পরিশোধ করব।
নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল খান বলেন, কৃষক দলিল উদ্দিনের দুটি বাগানের বরই লুটের খবর পেয়ে ফোন করে থানায় জানিয়েছি। তবে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে চাই, প্রশাসন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষিদের আইনের আওতায় আনুক।
গোসাইরহাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোতালেব হোসেন বলেন, নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছোট কালিনগর গ্রামের অগ্রগামী কৃষক মো: সোলায়মান হুলয়পট্টি এলাকায় সাড়ে তিন একর জমিতে বলসুন্দর, ভারতসুন্দর ও আপেলকুল ও মাল্টার বাগান করেছে। সেখানে প্রায় দেড় হাজার বরই গাছ রয়েছে। সে বাগানে ভালো ফলন হয়েছে। তবে গত দুই রাতে কিছু দুর্বৃত্তরা তার বাগন থেকে বরই লুট করে নিয়ে যায় বলে জানতে পারি। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার লিখিত অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুষ্পেন দেবনাথ বলেন, এ ঘটনা আমি শুনেছি। তারা সকালে আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন