বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২
মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ০৯:২০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ডেঙ্গুর হটস্পট মাটিরাঙ্গায় নেই মশা নিধনের উদ্যোগ

মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। ছবি : কালবেলা
মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। ছবি : কালবেলা

মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে ক্রমাগত বাড়ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রোগটি ইতোমধ্যে ভয়াবহ রূপধারণ করেছে। পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র মো. সামছুল হক।

মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, গত জুন মাসে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্য থেকে ৫ জন্যকে রেফার করা হয়েছে। জুলাই মাসে শনাক্ত বেড়ে হয় ২২ জন। এর মধ্যে ৯ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আক্রান্তের সিংহ ভাগই চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা। তাছাড়া ওই এলাকায় প্রায় সবার ঘরে ঘরে জ্বরসহ ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ রয়েছে। অনেকেই ভয়ে রক্ত পরীক্ষা না করে ডেঙ্গু হবার সন্দেহে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে জেলায় ৫১ জন্য ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত জুন মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন। এরই মধ্যে মাটিরাঙ্গায় চলতি মাসেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২ জন। ম্যালেরিয়ায় একজন। জেলার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় মাটিরাঙ্গা পৌরসভাকে ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে চলতি বছর এ রোগে কেউ মারা যাননি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাসপাতাল ও পৌরসভার অপরিচ্ছন্নতা এবং মশা নিধন না করার জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না পৌর মেয়র। গড়িমসি করেই সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। সরানো হচ্ছে না স্তূপ আকারের ময়লা-আবর্জনা।

মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো হাসপাতালের আশপাশের এলাকা। পরিষ্কার করার কোনো উদ্যোগ নেই কারোর। প্রতিটা ড্রেনে জমানো পানি যেন মশা বা ডেঙ্গু রোগের কারখানা। দুর্গন্ধে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

অপরদিকে ডেঙ্গু রোগীদেরকে মশারিবিহীন শুয়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের সেবিকাদের অভিযোগ, রোগীরা মশারিকে বালিশ হিসেবে ব্যবহার করে। মশারি টাঙানোর বিষয়টিকে তারা তোয়াক্কাই করেন না। সচেতনতার অভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানান চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গু বা মশাবাহিত রোগ হওয়ার আরেক স্থান হচ্ছে ধলিয়া লেক। সব পানিতেই যদি পাড়ে তবে মাটিরাঙা ও চৌধুরী পাড়ার মধ্যবর্তী ধলিয়া লেকই এডিস মশা ডিম পাড়ার উপযুক্ত স্থান। এই লেকের পানি বর্তমানে ব্যবহার হয় না বললেই চলে। ফলে এই অব্যাবহৃত পানি থেকে বিভিন্ন পানিবাহিত সংক্রমণ রোগসহ ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। তাছাড়া কচুড়িপানায় পরিপূর্ণ লেকটিতে আশপাশের মানুষের বাসার ময়লা আবর্জনায় রীতিমতো পচন সৃষ্টি করছে পানি। লেকটি পরিষ্কার করা ও মশার বংশবিস্তার রোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ছে। তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চৌধুরী পাড়ায় শিগগিরই মশা নিধন অভিযান শুরু দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এদিকে জ্বর হলেই হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষার আহ্বান জানিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গু রোগী আরিফ হোসেন বলেন, আমার বাড়ি মুসলিম পাড়া। একটি কফিশপে চাকরি করতাম। আমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। প্রচণ্ড জ্বরে অসহ্য হয়ে মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমার ডেঙ্গু জ্বরের প্রমাণ মিলেছে।

আরেক রোগী রামশিরা এলাকার আবদুল হামিদ জানান, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও মশক নিধন কার্যক্রম না থাকায় এমন ভয়াবহ অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। মাটিরাঙ্গা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিল্টন ত্রিপুরা বলেন, আপনারা জানেন, এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু রোগটা ছড়ায়। ঈদের পর থেকে এর সংক্রমণটা বেশি হচ্ছে শহর থেকে অনেকে এখানে ঈদ করতে আসেন। ঢাকা থেকে যখন কেউ আসেন তখন তিনি ডেঙ্গুর ফেক্টরটা নিয়া আসেন। লোকালি যেখানে জনবসতি বেশি সেখানে ভাইরাসটা দ্রুত ছড়াচ্ছে।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. সামছুল হক বলেন, ঈদপরবর্তী মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় ডেঙ্গু সংক্রমণটা বেড়ে গেছে। আমাদের দুটি ফগার মেশিন আছে। নষ্ট হবার পর একটা মেশিনের ব্যাটারি সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে আমরা পৌরসভার সব স্থানে মশার স্প্রে করতে পারব।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খায়রুল আলম বলেন, মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। সবাইকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১০

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১১

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১২

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৩

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৪

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৫

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

১৬

সোনালী ও জনতা ব্যাংকের অফিসার পদের ফল প্রকাশ

১৭

নরসিংদীতে একজনকে কুপিয়ে হত্যা

১৮

হোয়াটসঅ্যাপে নতুন কৌশলে অর্থ চুরি, যেভাবে নিরাপদ থাকবেন

১৯

টিটিইসহ ৫ জন আসামি / তিন মাসেও শেষ হয়নি ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার তদন্ত

২০
X