রাত পোহালে পবিত্র মাহে রমজান শুরু। সিয়াম সাধনার এ মাসটিকে ঘিরে প্রত্যেক পরিবারেই প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তবে খুলনায় বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা। বিশেষ করে রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, চাল, ডাল, ছোলা, বেসন, চিনি ও পেঁয়াজের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের মধ্যে।
রোজায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে দফায় দফায় বৈঠক করেও ফল মিলছে না। ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবার রমজানের আগেই ক্রেতাদের অসাধু সিন্ডিকেটে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
সোমবার (১১ মার্চ) বিকেলে খুলনার কেসিসি সন্ধ্যা বাজার, নিউ মার্কেট ও গল্লামারী এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, যা ১ মাস আগেও ৯০ টাকা ছিল। মাত্র ১৫ দিন আগের ৮০ টাকার মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মাঝারি মানের তিউনিশিয়ান খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। যা ২ মাস আগে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায় যা ১ মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১শ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ছাড়া ১ কেজি বেসন বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা। যা আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। বুটের ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১১০ টাকা। যা কিছুদিন আগেও ৯০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
ইফতারে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসি, ট্যাং, রুহ-আফজার দামও বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি দুই মাস আগে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২ হাজার ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ট্যাং বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা, যা আগে ৮০০ টাকা ছিল। বড় সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। ছোট সাইজের রুহ-আফজা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা। যা আগে ২০০ টাকা ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিনি, চাল-ডালসহ প্রতিটি পণ্যের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দেশি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমতে শুরু করলে তা এখনও রয়েছে নাগালের বাইরে। সোমবার যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা কেজিতে, গত দু’দিন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও শুক্রবার থেকে তা আবারও বৃদ্ধি পেয়ে ৯০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলেও কোনো লাভ থাকছে না।
মেহেদী হাসান নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। কারণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ একেবারে শেষ দিকে। এ কারণে বাড়তি দাম যাচ্ছিল পেঁয়াজের। প্রধান জাতের পেঁয়াজ অর্থাৎ হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত এলেই দাম কমে যেত। এর মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে এখনই দাম কমতে শুরু করেছে।
গললামারী বাজারে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, মাছ, মাংস, ফলমূল দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেগুন, কপি, সিম, বরবটিসহ সব তরকারির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোহাম্মদ আলী নামে একজন হাঁস মুরগি বিক্রেতা বলেন, রমজানের শুরুতে সব ধরনের হাঁস ও মুরগির দাম কজিতে ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গরুর মাংস ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা জিএম মহিউদ্দিন জানান, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্রকরে ঠিক রোজার আগমুহূর্তে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য কেনাকাটা করেছেন। ফলে নিত্যপণ্যের বাজার কিছুটা ওঠানামা করেছে। রমজান শুরুর এক সপ্তাহ পরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর আরও স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা যায়। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই।
মন্তব্য করুন