গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে গোলাম মোস্তফা (৩১) নামে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বন্দির মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেল তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে জিএমপির কোনাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
কোনাবাড়ি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ আহাম্মদ বাদী হয়ে গত ৭ জুলাই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে।
জানা গেছে, গোলাম মোস্তফা মাদারীপুরের শিবচর থানার উতরাইল গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকার ডেমরা থানার কোনাপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। মোস্তফা ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২)-এর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি ছিলেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম মোস্তফাকে ২০২১ সালের ১১ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কোনাবাড়ী থানাধীন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে পাঠানো হয়। সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ৭ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কারাগার থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে মর্গে পাঠায়। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে একদিন পর তার স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। ওই সময় কারা কর্তৃপক্ষ এটিকে আত্মহত্যা বলে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। ওই সময় নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার কামরুজ্জামান।
পুলিশ জানায়, ওই সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরতহাল প্রতিবেদনে লেখেন আত্মহত্যার জন্য যেসব নমুনা থাকার কথা তা নেই, এ ছাড়া নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন। সেই সময় হাইসিকিউরিটি কারাগারের সুপারের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল জলিল। তিনি বর্তমানে রাজশাহী কারাগারের দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে।
বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন— মৃত গোলাম মোস্তফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মো. শাফি মোহাইমেন মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত মতামত দিয়েছেন যে, গোলাম মোস্তফার মৃত্যু আত্মহত্যায় হয়নি। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, যে সময়ে ওই আসামির মৃত্যু হয় তখন এখানে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তবে কারাগারের ভেতরে কাউকে বা কোনো আসামিকে হত্যা করার মতো কোনো কারণ থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না। এই কারাগারের বন্দিরা সব সময় বিশেষ নজরদারিতে থাকেন। তবে বিভিন্ন সময় হতাশা থেকে বন্দিরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, অনেকে আত্মহত্যা করেছেনও।
কোনাবাড়ী থানার ওসি কেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন মামলার তদন্তের কাজ চলছে।
মন্তব্য করুন