মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ইছামতী নদীর তীর সংলগ্ন রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ৮টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ২২ বছরেরও অধিক সময় ধরে যাতায়াত করতে পারছে না। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের দিকে পদ্মা ভাঙনরোধে উপজেলার আন্ধারমানিক এলাকায় (বর্তমান লেছড়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন) ইছামতী নদীর মাঝে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়। এতে বর্ষায় পানির তীব্র স্রোতে বাহিরচরপূর্বপাড়া ও পেঁয়াজচর দুই গ্রামের মধ্যবর্তী সীমানায় রাস্তাটিতে ভাঙন দেখা দেয়। দিনে দিনে সেই ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিলে সেখানে রাস্তার মাঝে বড় আকারের একটা পুকুরে পরিণত হয়।
রাস্তার একপাশে নদী, অন্য পাশে ব্যক্তিমালিকাধীন পুকুর থাকায় ভাঙনের কবলে পড়ে রাস্তাটি পুকুরে সঙ্গে মিশে যায়। ফলে রাস্তাটি প্রায় দেড় থেকে দুইশো ফিট দৈর্ঘ্য গভীর জলাশয়ে পরিণত হয়। ওই জায়গাটি স্থানীয়দের ভাষায় লোকজনের কাছে পরিচিতি পায় কুম এলাকা বলে। এতে করে প্রায় ২২ বছর ধরে আট থেকে দশটি গ্রামের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহিরচর বেড়িবাঁধ থেকে ইছামতীর তীর ঘেঁষে সম্প্রতি রাস্তাটি প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। পিচ ঢালাইয়ের শেষ অংশেই ভাঙা রাস্তার শুরু। ওই ভাঙনের কারণেই রাস্তাটির কাজের দৈর্ঘ্য আর বৃদ্ধি করার সুযোগ নেই। এই ভাঙনের ফলে পেঁয়াজচর গ্রামের সহস্রাধিক জনগণকে প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। এ ছাড়াও বাহিরচর, বকচর, আলগীচর, জগনাথপুর, রামকৃষ্ণপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা কৃষিপণ্য নিয়ে লেছড়াগঞ্জ হাটে যেতে পারে না।
বাহিরচর পূর্বপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ বয়স্ক মোজাফফর হোসেন জানান, আমরা বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই রাস্তায় চলাচল করতে পারছি না। ওই ভাঙা জায়গায় ১২ মাস পানি থাকে। আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এখানে মাটি ফেলায় দুই পাশের ভাঙনের জায়গার পরিমাণ কিছুটা কমলেও জায়গা তো আর ভরাট হয়নি। চৈত্র মাসেও এখানে ৭/৮ ফুট গভীর পানি থাকে।
আমাদের একটাই দাবি, এখানে একটা ব্রিজ, না হলে দুইপাশে গাইড ওয়াল দিয়ে পুরো জায়গাটা মাটি দিয়ে ভরাট করে রাস্তাটি পরিপূর্ণ করার। এই ভাঙনকবলিত জায়গার কারণেই এই রাস্তা দিয়ে সরাসরি মানুষ চলাচল করতে পারছে না।
একই গ্রামের মোস্তফা কামাল জানান, এই ভাঙনের জন্য আমাদের প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয়। শিক্ষার্থী, কৃষকের কৃষিপণ্যসহ দূর-দূরান্তের পথচারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। তাই আমাদের দাবি, হয়তো এখানে মাটি ভরাট অথবা একটা ব্রিজ নির্মাণ করে রাস্তাটি সচল করার। এই একটা ভাঙন আমাদের দুইটি গ্রামকেও আলাদা করে দিয়েছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল হোসেন কালবেলাকে জানান, প্রায় তিন বছর আগে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে একটা ব্রিজ অনুমোদন করেছিলাম। কিন্তু রাস্তাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে চলে যাওয়ায় সেই ব্রিজটি হয়নি। অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। আমি আগেই চিন্তা করেছি আগামী এক মাসের মধ্যে ব্রিজ অথবা মাটি ভরাটের জন্য সরাসরি মন্ত্রণালয়ে আরেকটি আবেদন করব। যেটাই অনুমোদন হয়, ওইভাবেই কাজ করার চেষ্টা করব। আমরা চেষ্টা করছি যাচ্ছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ কালবেলাকে বলেন, ওখানে একটা ব্রিজের প্রস্তাবনা দেওয়া থাকতে পারে। ফাইল না দেখে সঠিকভাবে বলতে পারছি না। ফাইল দেখে পরে জানাব।
মন্তব্য করুন