নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত শংকর ব্যানার্জীর আদি বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর। দেশ ভাগের কারণে জন্মভিটা ছেড়ে কলকাতা পারি জমালেও নাড়ির টান আজও রয়ে গেছে অন্তরে। তাদের রেখে যাওয়া ৫০ একরের বেশি জমিতে গড়ে উঠেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তারই আওতায় বর্তমানে আছে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও আঞ্চলিক হর্টিকালচার সেন্টার। কৃষি গবেষণায় নিযুক্ত এইসব প্রতিষ্ঠানের কম্পাউন্ডে আজও রয়ে গেছে শংকর ব্যানার্জীর জন্মসময়ের সেই পুরানো স্থাপনা।
আর তা দেখেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বিশ্বখ্যাত এই বিশেষজ্ঞ। শুধু নিজেই নন, এবার পুরো পরিবার নিয়েই এসেছেন রেখে যাওয়া সেই ভিটায়।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) স্ত্রী গ্যাব্রিয়েল, দুই কন্যা শকুন্তলা ব্যানার্জী ও শর্মিলা ব্যানার্জী এবং জামাতা লুকাস ওয়ালপটকে নিয়ে স্পর্শ করে গেছেন পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি।
শংকর ব্যানার্জী সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে ১৯৪৭ সালের ২৩ আগস্টের কথা। বরিশাল থেকে স্টিমারে কলকাতা গিয়ে আর ফিরে আসতে পারিনি। তবে কুঁড়ি বছর আগে ২০০৩ সালে কাজের তাগিদে চট্টগ্রামে এসে ওখানকার বন্ধুদের আমার জন্মভিটার কথা জানাই। বন্ধুদের আগ্রহে সেবার বরিশালে এসে খোঁজ করে আমাদের পুরানো বাড়ির সন্ধান পাই।
সেবারের বাড়ি দর্শনের অভিজ্ঞতা পরিবারকে জানিয়েছিলেন। তা থেকেই স্ত্রী, সন্তান ছায়াঘেরা সুশীতল মায়াবী সেই বাড়ি দেখার আগ্রহের কথা জানান। পরিবারের আগ্রহে এবার তাই সবাইকে নিয়ে এলেন পরিত্যক্ত সেই স্মৃতিময় জন্মভিটা দেখতে। শংকর ব্যানার্জী বলেন, আবার কবে আসা হয় জানি না। মেয়েরা দেখতে চেয়েছিল বলেই জন্মভূমিতে ফিরে আসা।
শংকর ব্যানার্জী বর্তমানে জার্মানির বাসিন্দা। বয়স ৮৫ বছর। বরিশাল যখন ছেড়েছিলেন তখন বয়স ছিল ৮ থেকে ৯ বছর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কারণে বরিশালে ফিরে আসতে না পেরে পরিবারসহ তার পিতা প্রফুল্ল ব্যানার্জী ভারতের এলাহাবাদে বসবাস শুরু করেন এবং এলাহাবাদ কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন।
এলাহাবাদেই লেখাপড়া শুরু করেন শংকর ব্যানার্জী। সেখান থেকে ১৯৬০ সালে পড়াশোনার জন্য জার্মানিতে পাড়ি জমান। পড়াশোনা শেষে জার্মান মেয়ে গ্যাব্রিয়েলকে বিয়ে করে সেখানে ঘরবসতি শুরু করেন। প্রথমে টেক্সটাইল মিল করে ব্যবসা শুরু করলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ডিজাইনার হিসেবে পেশা বেছে নেন। তাতে সফলতা পান।
মন্তব্য করুন