পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে বরিশাল নগরীর সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এক টাকায় মিলছে ইফতার সামগ্রী। দুই বন্ধুর এমন উদ্যোগে হাসি ফুটেছে নগরীর খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কমটাকায় অনেকেরেই ইফতার কিনতে গেলে হিমশিম খেতে হয়।
সেখানে এইসব পরিবারের মানুষ স্থানীয় মিঠু ও সম্রাটের দোকানে বিকেল ৩ টা থেকেই ভিড় জমিয়ে কেনাকাটা করছেন। আর সবাই যাতে স্বাছন্দে ইফতার কিনে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারে সেই জন্য মূলত এই আয়োজন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি রোডে খাবার হোটেল চালান রবিউল ইসলাম মিঠু ও মো. নুরুল ইসলাম সম্রাট। দুই বন্ধুর ওই হোটেলে সারা বছর ভাতের পাশাপাশি তৈরি হয় আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, সবজির বড়া, কুমড়ো বড়ার মতো নানা পদ। নাস্তার এ পদগুলোর দামও দেশের অন্যান্য হোটেল বা রেস্টুরেন্টের মতোই।
কিন্তু এবার রোজায় ওই দুই উদ্যোক্তা নিয়েছেন অভিনব এক উদ্যোগ। বছর জুড়ে যেসব পদ তারা ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করেছেন রোজা উপলক্ষে সেগুলোর দাম রাখছেন মাত্র এক টাকা করে। আর এই দুই বন্ধুর এমন উদ্যোগে হাসি ফুটেছে নগরের খেটে খাওয়া মানুষের মুখে।
বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কম টাকায় ইফতার সামগ্রী কেনা যেখানে অকল্পনীয় বিষয়, সেখানে মিঠু ও সম্রাটের দোকানে বিকেল ৩টা থেকেই কেনাকাটা করছেন।
রবিউল ইসলাম মিঠু জানান, রমজান মাস এলেই দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন। এ সময় গরিব-মধ্যবিত্তদের কেনাকাটা করা অনেক কষ্ট হয়। তাই আমরা চিন্তা করেছি কীভাবে সমাজের গরিব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সেই চিন্তা থেকে রমজান মাসে আমরা ১ টাকায় ইফতারের পদ বিক্রি করার চিন্তা করি। আমার অনেক ভাই, বন্ধুরা আছেন তারা আমাকে সহযোগিতা করছেন। না হলে এত কম টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হতো না। এদের মধ্যে অনেকেই দোকানে কাজ করে সহযোগিতা করছে।
২০২৩ সালে এ উদ্যোগ শুরু করেছি। সে সময় মানুষের বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। হয়তো এবারও পাব। গত বছর দেখেছি বিকেল ৫টার আগেই আমাদের কেনাবেচা শেষ হয়ে যেত। এবারও দোকানের সামনে ভিড় জমতে শুরু করেছে। হয়তো মানুষের সাড়া পাব।
অপর উদ্যোক্তা মো. নুরুল ইসলাম সম্রাট বলেন, চারদিকে যে হারে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে এতে সবার খারাপ অবস্থা। তাই আমার বন্ধু রবিউল রমজান মাসে সবাইকে একটু স্বস্তি দেওয়ার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা ১২ মাস ধরেই তো ব্যবসা করি, রমজান মাসে একটু কম ব্যবসা করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।
ইফতার সামগ্রী কিনতে আসা শাওন বলেন, এখনকার বাজারে ১ টাকায় ইফতারের পদ পাওয়া এটা আসলেই অকল্পনীয় ব্যাপার। তাই খুশিতে আজ এখানে কেনাকাটা করছি। আসলেই উদ্যোগটা দারুণ। যারা অল্প পয়সায় ইফতার কিনতে চায় তারা এখন থেকে অনায়াসে কিনতে পারে।
রিকশাচালক মানিক বলেন, এ দোকানটা না থাকলে ইফতার কিনে খাওয়ার সাহস পাইতাম না। এ ভাইগো অনেক ধন্যবাদ। এক টাকার মধ্যে ইফতারির ৭টি আইটেম পাওয়া যায়। এর মধ্যে- আলুর চপ, পেঁয়াজু বড়া, বেগুনি, সবজির বড়া, কুমড়োর বড়া, শিমের চপ, কলার চপ। এর বাইরে ডিমের সাসলিক ১০ টাকা, মুরগির সাসলিক ২০ টাকা এবং গরুর সাসলিক ৩০ টাকায় পাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন