রিয়াদ হোসেন রুবেল, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাটির তৈরি খেলনা। ছবি : কালবেলা
সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাটির তৈরি খেলনা। ছবি : কালবেলা

রমজান শেষেই ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ। চলছে ঈদ ও বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি। কোথাও মাসব্যাপী মেলা, আবার কোথাও চৈত্রসংক্রান্তির শুরু থেকেই হবে নানা ধরনের উৎসব। বৈশাখের এই মেলা আর ঈদ উৎসব রাঙাতে শিশুদের মনে বড় একটি জায়গা দখল করে আছে মাটির তৈরি খেলনা।

তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প। একসময় খুব কদর ছিল রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির মৃৎশিল্পের। এখন সেখানে আর সেই জৌলুশ নেই।

বালিয়াকান্দির পাল পাড়ার স্বপন কুমার পাল, বিনয় কুমার পাল ও আকাশ পাল জানান, তারা প্রত্যেকেই মেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করছেন। খেলনার মধ্যে রয়েছে, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, গণেশ পাগলসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, বানর, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, নৌকা, মাছ, হাঁস, মুরগির ডিম ইত্যাদি।

ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তাল ইত্যাদি। তারা জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই আমরাও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টায় আছি। সারাবছরই আমরা মাটির জিনিস তৈরি করি। সিরামিক, প্লাস্টিক ও ধাতব তৈজসপত্রের জন্য আমাদের শিল্পে অনেকটাই ধ্বস নেমেছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবুও আমরা গুটিকয়েক পাল পরিবার পুরোনো পেশা আঁকড়ে আছি। যখন কোনো মেলা বসে তখন আমরা মেলার জন্যও খেলনা তৈরি করি।

জামারপুর নলিয়া গ্রামের শুকুমার কুমার পাল জানান, বংশ পরম্পরায় ও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এখনও মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছি। দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করা এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি করা পাত্রগুলোকে প্রথমে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। পরে শিল্পীর নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় রঙের তুলির আঁচড়ে ফোটানো হয় চমৎকার সব আলপনা।

তিনি বলেন, বর্তমানে ধাতব ও প্লাস্টিকের খেলনা সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজ বিলীন হতে চলেছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প।

এদিকে কুমারদের দাবি, তৈরিকৃত মাটি, উপকরণ ও পোড়ানোর খরচ বেশি হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে অনেক পরিবার।

ভৃড়ীমাগুরা নলিয়া গ্রামের পালপাড়ার নারী মৃৎশিল্পী আর্চয রানী পাল কালবেলাকে বলেন, একসময় মাটির তৈরি জিনিসপত্রের খুব কদর ছিল। সে সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বাইরে থেকে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হতো। এখন মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর অনেক কমে গেছে। বাপ-দাদা ও স্বামীর পেশা হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে এ পেশা এখনো ধরে রেখেছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় পাল সম্প্রদায়ের বেশ কিছু পরিবার এখনো মাটির বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করছে। মৃৎশিল্প আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ। সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না 

শীত আরও বাড়বে কিনা জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

নওগাঁয় শীতের তীব্রতায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ঘরে 

জুলাই আন্দোলনে আহত না হয়েও প্রতি মাসে ভাতা তুলছেন যুবক

চিড়িয়াখানায় সিংহের কাছে গিয়ে প্রাণ হারাল কিশোর

দিনাজপুরে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.১ ডিগ্রি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনসিপির সদস্য সচিব

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট

ইতিহাস বদলে দিল বাংলাদেশ, যা আগে কখনো ঘটেনি

মেহেদির রং না শুকাতেই নববধূ ইলমা বিধবা

১০

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাকে শোকজ

১১

ভেজাল গুড় খেলেই হতে পারে যেসব জটিল রোগ

১২

শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যু ৪১০, নিখোঁজ ৩৩৬

১৩

বেগম জিয়ার অসুস্থতা হাসিনার কারণেই : রিজভী

১৪

সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে পুশইন বিএসএফের

১৫

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হবে উৎসবমুখর : প্রধান উপদেষ্টা 

১৬

পর্তুগালের জালে এক হালি গোল দিয়েও মন ভরেনি ব্রাজিলের

১৭

দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

১৮

সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া যুবশক্তির ২ নেতাকে অব্যাহতি

১৯

‘আমি আর কত ক্ষতিগ্রস্ত হবো?’—প্রশ্ন বিজয়ের

২০
X