

বাংলার শীতের কথা বললে মাথায় আসে পিঠা-পুলি, গরম চা, আর সেইসঙ্গে গুড়ের মিষ্টি স্বাদ। পৌষ মাসে বাজারে পিঠার মৌসুম শুরু হয়। ঘরবাড়িতে পিঠা তৈরি হয়, ছোট-বড় সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। পিঠার স্বাদ নিখুঁত করতে গুড়ের ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু সবাই কি জানে, সেই গুড় সব সময় খাঁটি হয় না?
বেশিরভাগ সময় আমরা ভেজাল গুড় ব্যবহার করি, যা দেখতে সাধারণ গুড়ের মতোই লাগে, কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বাজারে নানা ধরনের গুড় পাওয়া যায়—খেজুর গুড়, তাল গুড়, আখের গুড়। তবে এসব গুড়ে কৃত্রিম উপাদান ও রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি করা হয়, যা শরীরে নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আমাদের অজান্তেই পুরো পরিবার সেই ভেজাল গুড় ব্যবহার করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ভেজাল গুড় খেলে লিভার, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে শুরু করে এমনকি ক্যান্সারের মতো গুরুতর অসুখও হতে পারে।
ডা. রুদ্রজিৎ পাল, কলকাতার একজন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভেজাল গুড় শুধু স্বাদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, এটি স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই মৌসুমে গুড় কেনার আগে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
ভেজাল গুড়ে থাকে অতিরিক্ত চিনি ও কৃত্রিম উপাদান, গুড়কে ঘন ও আকর্ষণীয় দেখানোর জন্য রাসায়নিক। কখনো কখনো ক্ষতিকর রাসায়নিক, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য বিপজ্জনক।
লিভারের সমস্যা: নিয়মিত ভেজাল গুড় খেলে লিভারের কাজ প্রভাবিত হতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা: শরীরের নার্ভ সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব।
ক্যান্সারের ঝুঁকি: দীর্ঘদিন ভেজাল গুড় খেলে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে।
পেটের সমস্যা: গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে।
স্বাদে পার্থক্য: খাঁটি গুড় মিষ্টি হয়, ভেজাল গুড় খুব মিষ্টি নয় এবং মাঝে মধ্যে লবণাক্ত স্বাদ থাকে।
পানি পরীক্ষা: এক গ্লাস পানিতে সামান্য গুড় দিয়ে মিশান। খাঁটি গুড় ধীরে ধীরে মিশে যাবে, ভেজাল গুড় গ্লাসের তলায় জমে থাকবে।
দৃঢ়তা ও রঙ: খাঁটি গুড় প্রাকৃতিক, নরম ও মসৃণ হয়। খুব গাঢ় বা চকচকে কালচে রঙ থাকলে সতর্ক হওয়া ভালো।
- পরিচিত ও বিশ্বস্ত দোকান থেকে গুড় কিনুন।
- গুড় সংরক্ষণ করতে ঠান্ডা, শুকনো জায়গা বেছে নিন।
- শিশু ও বয়স্কদের জন্য খাঁটি গুড় ব্যবহার করা নিরাপদ।
শীতের মজা যেন স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, তাই একটু সচেতনতা ও সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র : এই সময় অনলাইন
মন্তব্য করুন