বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়ান জয়পুরহাট আক্কেলপুরের রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ রোজাদার ব্যক্তি ইফতার ও সেহরি খান তার হোটেলে। তিনি ৯ বছর ধরে এ কাজ করে আসছেন।
গত ১১ মাসে যা আয় করেন সেখান থেকে সঞ্চয় করা টাকায় রোজাদারদের মেহমানদারি করেন রফিকুল। টাকা না দিয়ে ইফতার ও সেহরি খাবেন সবাই, এটাই রমজান মাসে রফিক হোটেলের নিয়ম। এই নিয়ম ৯ বছর থেকে ধরে রেখেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ইফতার ও সেহরির সময় আক্কেলপুর কলেজ বাজার কাঁচামাল পট্টির রফিকের হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলের পাশে কাপড় বিছিয়ে ইফতার পরিবেশন করছেন কর্মচারীরা। যার যার মতো করে ইফতার করছেন রোজাদাররা।
ভোর রাতে হোটেলজুড়ে চলছে সেহরিপর্ব। প্লেট নিয়ে যে যার মতো টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন। মালিক ও কর্মচারীরা খাবার পরিবেশন করছেন। খাওয়ার পর কোনো টাকা নেন না হোটেল মালিক।
স্থানীয়রা জানান, রফিকুল ২০১৬ সাল থেকে ৯ বছর ধরে রমজান মাসে রোজাদারদের টাকা ছাড়াই সেহরি ও ইফতার করান। এই হোটেলে টাকা ছাড়াই নিয়মিত সেহরি ও ইফতারি খেতে পারেন সবাই।
রফিকুল ও তার কর্মচারীররা খাবার পরিবেশন করেন। সেহরির খাবারে থাকে গরুর মাংস, মাছ, ভাজি, ডাল এবং দুধ। ইফতারিতে থাকে বিরিয়ানি, ছোলা, জিলাপি, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, সালাত ও শরবত। প্রতিদিন সেহরিতে ১২০ এবং ইফতারে ১৫০ জন ব্যক্তিকে খাওয়ান তিনি।
ইফতার খেতে আসা আক্কেলপুর পৌরসভার প্রকৌশলী মো. রহিচ উদ্দীন মিয়া বলেন, চাকরির কারণে আমি এখানে একা থাকি। সবসময় হোটেল থেকে খাবার কিনে খাই। রমজান মাসে খাওয়া নিয়ে খুব চিন্তায় থাকতে হতো। রফিক মিয়া আমাদের বিপদের বন্ধু। ইফতার খেয়ে টাকা দিতে চাইলেও সে কোনো টাকা নেয় না। সবাইকে বিনা পয়সায় ইফতার এবং সেহরি খাওয়ানোই তার ইচ্ছা।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলাহাট এলাকার বাসিন্দা রিফাত হোসেন শাওন বলেন, হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছি। রাতে সেহরি খাওয়ার জন্য হোটেল খুঁজতে এসে এই হোটেলে আসি। এখানে অনেক ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। খাওয়ার পরে বিল দিতে এসে জানতে পারি তিনি টাকা না নিয়ে খাওয়ান। ওনার এই কার্যক্রমে আমাদের মতো অনেক বিপদগ্রস্ত লোকের উপকার হয়।
সবজি ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা বলেন, ভোর রাতে সবজি কিনতে বাজারে আসতে হয়। রমজান মাসে বিনে পয়সায় সেহরি ও ইফতার করান রফিক মিয়া। আমিও এখানে এসে খাই।
পৌর শহরের বাসিন্দা বিল্পব বলেন, এখানে এসে ইফতারের সময় হওয়ায় রফিক হোটেলে গিয়ে ইফতার করেছি। আমার কাছ থেকে টাকা নেননি। আমার মতো অনেকেই ইফতার করেছেন। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অনেক ভালো কাজ।
হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, রমজান মাসে খাবারের হোটেলগুলো বন্ধ থাকে। এতে ইফতারি ও সেহরির সময় রোজাদারদের অনেক কষ্ট হয়। বছরের ১১ মাস আমি হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি কিছু জিনিস যেমন চাল, ভুট্টা, আলু জমিয়ে রাখি। প্রতিদিনের আয় থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রেখে রমজান মাসে সব রোজাদারদের খাওয়ানোর চেষ্টা করি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সবাইকে খাওয়াচ্ছি। এ কাজে আমার হোটেলের কর্মচারীরা সহযোগিতা করে। তারাও এই মাসে কোনো পারিশ্রমিক নেয় না। পরকালের মুক্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আমি এই কাজ করি। যতদিন বাঁচব এটা যেন চালু রাখতে পারি- সবার দোয়া চাই।
আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওর্য়াড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম পল্টু বলেন, রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম ৯ বছর টাকা ছাড়া সেহরি ও ইফতার করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অন্য এলাকা থেকে আসা রোজাদাররা অনেক উপকৃত হন। এটি একটি মহৎ কাজ।
মন্তব্য করুন