বগুড়ায় শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবিতে ৬২ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছেন। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) থেকে দুপুর ১২টার দিকে শজিমেক হাসপাতালে কর্মরতরা এ আন্দোলনে নামেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে তারা এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন। এর আগে শনিবার (২৩ মার্চ) রাত ৮টা থেকে সোমবার (২৫ মার্চ) রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা চার দাবিতে তাদের প্রথম দফার ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন।
চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৫০ হাজার এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা করা। এফসিপিএস, রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করা, বিএসএমএমইউয়ের অধীন ১২ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের রেসিডেন্ট ও নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা পুনরায় চালু করা এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন সংসদে পাস ও বাস্তবায়ন করা।
এদিকে শজিমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের টানা ৫ দিনের কর্মবিরতির প্রথম দিনেই চিকিৎসাসেবা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। তারা দায়িত্ব পালন না করায় রোগীদের ভরসা এখন নার্স। চিকিৎসকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। রোগীদের অভিযোগ, শনিবার রাত থেকে তারা ভালো সেবা পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ২৪ ঘণ্টায় শজিমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউতে ৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই ওয়ার্ডে হৃদরোগে আক্রান্ত অন্তত অর্ধশত রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। সেখানে রোগীরদের সেবা দেওয়ার জন্য একজন রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পাশাপাশি ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও দায়িত্ব পালন করেন। তবে কর্মবিরতি থাকায় মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে গুরুতর এই ওয়ার্ডের চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে শুধু সিসিইউতে নয় অন্যান্য ওয়ার্ডেও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। তারা এখন নার্সদের ওপরই ভরসা করছেন। বিপুলসংখ্যক রোগী সামলাতে গিয়ে নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। মোট ২৮টি ওয়ার্ডে ৫০০ শয্যার হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ২৫০টিতে উন্নীত করা হলেও জনবল না বাড়ানোয় ২২০ জন রেজিস্ট্রার চিকিৎসক নিয়ে চিকিৎসা দিতে দুরূহ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালটিতে সার্বক্ষণিক দেড় হাজারের ওপরে রোগী ভর্তি থাকে এবং বহিঃবিভাগে কয়েক হাজার রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
শজিমেক হাসাপাতালে ১৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। সকাল-বিকেল ও রাতের তিন শিফটে তারা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে দুপুর ২টার পর থেকে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ও রেজিস্ট্রার চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করে চলে যান। এরপর থেকে ইন্টার্ন চিকিসকেরাই হাসপাতালে আসা সেবা প্রার্থীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। শজিমেক হাসপাতালে প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত দুই থেকে ৩ জন করে শিফটগুলোতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন ও সকালের শিফটে সব ইন্টার্নরাই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ শজিমেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি ডা. তৌফিক হাসান নিশাত বলেন, বাংলাদেশের সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রাণের দাবি হলো তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। সেই প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক একত্রভাবে আন্দোলন করেছিল। তাদের সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন যে সবার বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়নি। এরপর বারবার আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল ও হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালের বেডের চাইতেও তিনগুণ রোগী বেশি থাকে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের যে জনবল আছে তাই নিয়ে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন