চট্টগ্রামের একটা বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ফেল করা ছাত্রদের পাস করিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল এক ছাত্রলীগ নেতা। ফেল করা ছাত্রসহ একাধিক লোকবল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে পাস করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। এরই মধ্যে নানাভাবে ব্যর্থ হলে স্কুলের দায়িত্বশীল বা পরিচালনা পরিষদের অন্যতম সদস্য একজন কাউন্সিলরকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন তিনি। অবশেষ নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডিও করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের মোগলটুলী এলাকায় সুপরিচিত বিদ্যাপিঠ খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয়। ওই স্কুলের ২০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ফেল করে। কিন্তু অভিবাবকদের অনুরোধে তাদের আবার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়েও ১১ শিক্ষার্থী ফেল করে। ‘ডাবল ফেল’ করা এই ১১ শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দিতে রীতিমতো তুলকালাম ঘটিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এতটা বিগড়ে গেছে, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুসারী ও ছাত্রলীগের একটি অংশ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে উত্তেজনা। এহসান আহমেদ (লুৎফুল এহসান) নামের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) চট্টগ্রাম সটি করপোরেশনের (চসিক) ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর।
জিডিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, একটি স্কুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছেন এহসান নামের ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে চসিক কাউন্সিলর বাহাদুরকে মোবাইল ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এহসান। এমনকি কাউন্সিলরকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।
চসিকের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর কালবেলাকে বলেন, ‘স্কুলটির পরিচালনা পর্ষদ বোর্ডের সভাপতি হলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আমি ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি। স্কুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এহসান আমাকে চাপ দিচ্ছিল। আমি যা যুক্তিসঙ্গত সেই কথায় তাকে জানায়। কিন্তু দুপুরে তিনি আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। থানায় অভিযোগ (জিডি) করেছি আমি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের মোগলটুলী এলাকায় অবস্থিত খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয় প্রথম দিকে প্রাইমারি স্কুল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। প্রাইমারি স্কুলটি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে মাত্র ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে শুরু হওয়া এ স্কুলে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। স্কুলটিতে নিজস্ব ২২ গণ্ডা জমিতে দুটি পাঁচ তলা (গ্রামার স্কুলটি লিফট বিশিষ্ট ৮তলা) ভবনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সম্প্রতি স্কুল পরীক্ষায় ২০ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হলে তাও ১১ জন শিক্ষার্থী ফেল করে। পরে ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিতে ছাত্রলীগ নেতা এহসান স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সর্বশেষ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শো-ডাউনের ঘটনাও ঘটেছে।
খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহিবুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, এটি ছোট-খাটো বিষয়। এটা আমরা সমাধান করেছি। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হচ্ছে শিক্ষামন্ত্রী বহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগ নেতা এহসানের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত এহসান আহমেদ (লুৎফুল এহসান) চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কর্মাস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তাছাড়া নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু-রণি কমিটির যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নগরীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এর আগে ২০২৩ সালের শুরুতে শিপিং ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ছাত্রলীগ নেতা এহসান। ওই সময় আবদুস সাত্তার নামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ থানায় জিডি করেছিলেন।
মন্তব্য করুন