সিলেটে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে দুই মাস ধরে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১১নং ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুস সালামসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আব্দুস সালাম নগরের লালাদিঘির পার এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে। এছাড়াও এ মামলার অপর আসামি আব্দুল মনাফ (৩৮) একই এলাকার ইশাদ মিয়ার ছেলে। তিনি সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। এ ছাড়াও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্যাতিতা ওই তরুণী নগরীর শেখঘাটের একটি বোতল ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। পরিবারের সদস্যরা ওই তরুণীকে সিলেট শহরের বাসায় রেখে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। এই সুযোগে একই কলোনির বাসিন্দা রেখা বেগম লালদিঘীরপাড়ের আবদুস সালামের সঙ্গে তরুণীকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আবদুস সালাম ‘ভালো কাজ’ দেওয়ার প্রলোভন দেখায় তরুণীকে।
গত ৭ জানুয়ারি রেখা বেগম তরুণীটিকে আবদুস সালামের লালদিঘীরপাড়স্থ বাসায় নিয়ে যায়। পরে বাসার একটি রুমে ২২ দিন আটকে রেখে আবদুস সালাম তাকে ধর্ষণ করে। পরিবারের সদস্যরা সিলেট নগরীস্থ বাসায় ফিরে তরুণীকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেন। কিন্তু কোথাও না পেয়ে থানায় জিডি করতে চাইলে রেখা বেগম তাদের বাধা দেয় এবং আবদুস সালামের কাছে নিয়ে যায়। তিনি তরুণীটিকে উদ্ধারের ব্যাপারে আশ্বাস দেয়। কয়েকদিন পর পরিবারের সদস্যরা আবারও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছে গেলে তিনি জানায় লন্ডন প্রবাসী একটি পরিবারের কাছ থেকে তরুণীটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় ও প্রবাসীর পরিচয় জানতে চাইলে আবদুস সালাম ক্ষেপে যায়। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, এ ঘটনার ৩ দিন পর আবদুস সালাম বিয়ের কথা বলে ওই তরুণীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে মামলার অপর আসামি আবদুল মনাফের মাধ্যমে তাকে হবিগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তরুণীকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে গত ২৬ মার্চ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে কৌশলে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ দাখিলের পরপরই সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস কালবেলাকে বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। আবদুস সালাম ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন