চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামের ১০ একর যেন বাঘের রাজ্য

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একটি বাঘ। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একটি বাঘ। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চট্টগ্রামের পাহাড়তলী। ১৯৮৯ সালে সেখানে পাহাড়ের পাদদেশেই প্রায় ১০ একর জায়গায় গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। তিন যুগ নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেদিনের চিড়িয়াখানা এখন যেন হয়ে উঠেছে পুরোদস্তুর বাঘের রাজ্য।

একসময় বাঘশূন্য চিড়িয়াখানা এখন বাঘের তর্জন-গর্জনে কাঁপছে। ২০১৬ সালে আফ্রিকা থেকে আনা দুটি বাঘের প্রজননের মাধ্যমেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭। বাঘের রাজ্য খ্যাত এই চিড়িয়াখানা থেকে গত বছর এক জোড়া বাঘের ঠাঁই হয় রংপুর চিড়িয়াখানায়। তবে একটা সময় চিড়িয়াখানায় বাঘের পথচলাটা মোটেও সহজ ছিল না।

জানা গেছে, ২০১২ সালের পর থেকে ২০১৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ছিল বাঘশূন্য। পরে ২০১৬ সালের দিকে আফ্রিকা থেকে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হয় দুটি বাঘ। ওই জোড়া বাঘের নাম রাখা হয় রাজ, বাঘিনীর নাম পরী। এরপর ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুটি বাঘ থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭টিতে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়াারিতে জো বাইডেন ও জয়ার ঘরে জন্ম হয় আরও তিনটি বাঘ শাবক। তাদের নাম রাখা হয় প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী।

মানুষের হাতে লালন-পালন হয়ে পুনরায় বাঘ পরিবারের সঙ্গে একত্রকরণের মাধ্যমে বংশবিস্তার করার ঘটনা দুরূহ ব্যাপার। তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এই কঠিন কাজটি শুরু করে আরও আগেই। ২০১৬ সালের দিকে আফ্রিকার থেকে আনা রাজ ও পরীর ঘরে ২০১৮ সালে জন্ম নেয় শুভ্রা ও জয়া। ২০১৯ সালে বিশ্ব যখন কোভিডে জর্জরিত তখন জন্ম হয় করোনার।

২০২০ সালে জন্ম নেয় জো বাইডেন। ২০২১ সালে বেলি, টগর, গোলাপ, টুনি, বকুল ও জবা নামের আরও ছয়টি বাঘের জন্ম হয়। ২০২২ সালে পদ্মা, মেঘনা, হালদা, সাঙ্গু নামের আরও চারটি সাদা বাঘের জন্ম হয়। ২০২৩ সালে বন্ধ ছিল প্রজনন। ২০২৪ সালে জো-বাইডেন ও জয়ার ঘরে জন্ম হয় আরও তিনটি বাঘ শাবক। এরই মধ্যে ২০২৩ সালে প্রাণী বিনিময়ের আওতায় এক জোড়া বাঘ (গোলাপ ও বকুল) রংপুর চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে তার পরিবর্তে জলহস্তী পেয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

সারাবিশ্বে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে। বিশ্বে বাঘপ্রেমী মানুষ ও সংগঠনগুলো নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। এমন বাস্তবতায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কীভাবে সুন্দরবনে বাঘ অবমুক্ত করার স্বপ্ন দেখছে এমন প্রশ্নের জবাবে চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ২০১৬ সালের আগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ ছিল না। ওই বছর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে। সেই বাঘ দম্পতিই থেকেই বাঘের বৃদ্ধি শুরু হয়।

তিনি বলেন, বাঘগুলোকে আমরা মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। সবার সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভালো ফল এসেছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে চারটি সাদা বাঘ জন্ম নিয়েছে যা বিরল ঘটনা। বর্তমানে মোট পাঁচটি সাদা বাঘ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রাণী বিনিময় কর্মসূচির আওতায় ২০২৩ সালে দুটি বাঘের বিনিময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি জলহস্তী আনা হয়। এক জোড়া বাঘা পাঠানো হয় রংপুর চিড়িয়াখানায়। আশা করি আগামীতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘ দেশের অন্যান্য চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কেও দেখা যাবে।

দাগ চিনিয়ে দেয় নাম

গায়ে ডোরাকাটা দাগ আর গম্ভীর চলাফেরা। সাদামাটা চোখে বাঘ দেখতে এমনই। দেখতে একই হলে কারও নাম রাখা হয়েছে বেলি, টগর, জবা কিংবা করোনা। এভাবে ১৭টি বাঘের ১৭টি নাম। দেখতে একই হলেও মানুষের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্টের মতো বাঘের শরীরের ডোরাকাটা দাগে রয়েছে ভিন্নতা। এই ভিন্নতার কারণেই ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘগুলোকে আলাদাভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হন সংশ্লিষ্টরা। তা ছাড়া নাম ধরে ডাক দিলেই তাদের আচরণ-অঙ্গভঙ্গিতে বোঝা যায় কোন বাঘের নাম কি।

রাজ-পরীর গায়ে কালো পশম ও কমলা ডোরাকাটা থাকলেও, তাদের ১৪টি শাবকের মধ্যে পাঁচটি শাবকের শরীরে সাদা পশম ও কালো ডোরাকাটা। যা বিরল ঘটনা। সাধারণ প্রতি এক হাজার বাঘের মধ্যে একটি সাদা বাঘের জন্ম হয়। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পদ্মা, মেঘনা, হালদা ও সাঙ্গু নামের চারটি সাদা বাঘ শাবক একত্রে জন্ম নেয়। এর আগে ২০১৮ সালে জন্ম হয় সাদা বাঘ শুভ্রার। বর্তমানে ১৭টি বাঘের মধ্যে ১১টি বাঘিনী ও ছয়টি বাঘ আছে। যার মধ্যে সাদা বাঘ রয়েছে পাঁচটি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমাদের আদর্শগত শত্রু বিজেপি, বললেন থালাপতি বিজয়

৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় প্রধান শিক্ষককে বিদায়

পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নাম হবে গণহত্যাকারী : আসিফ মাহমুদ

নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান

নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচ বাংলাদেশি ফুটবলার

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৮৫ বিলিয়ন ডলারে

জাকসু নির্বাচন, ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নিয়ে আসছে ছাত্রশিবির

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

১০

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

১১

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

১২

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

১৩

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

১৪

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

১৫

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৬

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

১৭

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১৮

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

১৯

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

২০
X