ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘কী অন্যায় করছিলাম যে এত শাস্তি পেতে হলো’

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজ পরিবারের ৪ সদস্য নিহতের ঘটনায় মুহ্যমান বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মোল্যা। ছবি : কালবেলা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজ পরিবারের ৪ সদস্য নিহতের ঘটনায় মুহ্যমান বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মোল্যা। ছবি : কালবেলা

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রাকিবুল হোসেন মিলনের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তারা মোল্যা। সন্তান, সন্তানের স্ত্রী ও ছোট্ট দুই নাতিকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করেন আর বলেন, আমি কী অন্যায় করছিলাম যে আমাকে এত শাস্তি পেতে হলো!

ফরিদপুর সদরের কানাইপুরে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চার সদস্যের একটি পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে চারজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।

দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যরা হলেন- রাকিবুল হোসেন মিলন মোল্যা, তার স্ত্রী সুমি ও তাদের দুই ছেলে।

এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রাম। এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট একটি নদী পার হলেই আলফাডাঙ্গা উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম হিদাডাঙ্গা। সেখানেও একই পরিবারের ২ জনসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এরপর ৩ কিলোমিটার পথ চক্রকারে ঘুরলেই পাওয়া যাবে একে একে ৫ জন নিহত হওয়ার করুন সংবাদ। যার মধ্যে একই পরিবারের রয়েছে আরও ৩ জন সদস্য। স্বজনদের আহাজারিতে গোটা এলাকা শোকে মুহ্যমান।

মিলন ঢাকায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিফটম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি ফরিদপুরের ছত্রাকান্দা গ্রামে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাকিবুল মেজ। রাকিবুল ঈদের ছুটি শেষে সোমবার ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিয়ে বিকেলে আবার বাড়িতে যান। আজ সকালে তিনি, তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও মাসহ অন্য আরও ১৪ জনকে সঙ্গে নিয়ে পিকআপ ভ্যানে ফরিদপুরে আসছিলেন তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণ আনতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন মিলনসহ জেলার আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার ১৫ জন। তারা সকাল ৬টায় একটি পিকআপ ভ্যানে রওনা হন। পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর শহরতলীর কানাইপুরে অ্যাবলুম ক্যাফেটেরিয়ার সামনে মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে পিকআপ ভ্যানে থাকা ১৫ যাত্রীর ১৪ জনই মারা যান। মিলনের মা হুবাইয়া বেগম হুরি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্বজনদের কাছে ১৪ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন করিম হাইওয়ে থানার ওসি সালাউদ্দিন চৌধুরী।

নিহতরা হলেন- বোয়ালমারী শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রাম রাকিব হোসেন মিলন (৪২), তার স্ত্রী শামিমা আক্তার সুমি (২৫), তাদের দুই ছেলে আলভী রোহান (৭) ও ছোট ছেলে আবু সিনান (৪), একই এলাকার মৃত আব্দুল ওহাবের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৭০), উপজেলার রুপপাত ইউনিয়নের মো. ইব্রাহীম (৩২)। পিকআপ ভ্যানচালক আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদি গ্রামের নজরুল মোল্ল্যা (৩৫), হিদাডাঙ্গা গ্রামের শুকুরন বেগম (৯০) ও তার মেয়ে মনিরা বেগম সূর্য (৫৫) এবং প্রতিবেশী কহিনুর বেগম (৬০)।

আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের চরবাকাইল গ্রামের তবি খান (৫৫), বেজিডাঙ্গা গ্রামের একই পরিবারের মা জানাহারা বেগম (৫০), মেয়ে সোনিয়া বেগম (৩০) ও তার ১১ মাস বয়সী শিশু সন্তান নুরানী।

দুর্ঘটনায় নিহত মিলনের ভাই হাবিবুর কালবেলাকে জানান, তার ভাই আমার ভাই মিলন অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিফটম্যানের চাকরি করতেন। এলাকার কয়েকটি পরিবারের জন্য মিলন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ত্রাণের কিছু টিন বরাদ্দ করেছিলেন। সেটা আনতেই আজ সকালে জেলা ডিসি অফিসে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমার ভাইয়ের পুরো পরিবার নিহত হয়েছে। আমার মাও সঙ্গে ছিলেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার মা আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

হিদাডাঙ্গা গ্রামের নিহত শুকুরনের ভাতিজি রহিমা বেগম কালবেলাকে বলেন, সৈয়দ হাচান ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চাকরির সুবাদে এলাকার অনেককে একাধিকবার দুই বান টিন ও ৬ হাজার টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করতেন। চর বাকাইল গ্রামের নিহত তবিবর খান হাছানের আপন ছোট ভাইয়ের শ্বশুর এবং হিদাডাঙ্গা গ্রামের নিহত কহিনুর বেগম হাচানের সম্পর্কে ফুফু হন। সবাই একসঙ্গে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার পরই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুই গাড়িচালকের অসচেতনতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শহরতলীর কানাইপুরের দ্বীপনগর এলাকায় বাস ও পিকআপভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের ৫ লাখ, আহতদের ৩ লাখ এবং মরদেহ দাফনের জন্য আরও ২০ হাজার ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার নিহত সকলের প্রতি গভীর শোক জানিয়েছেন। বোয়ালমারী নিহত মিলনের পরিবারকে ৪০ হাজার, মর্জিনা বেগম ও ইকবাল হোসেনের পরিবারকে পৃথকভাবে ২০ হাজার টাকা এবং আলফাডাঙ্গার নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহোযোগিতা পাঠিয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাকসুতে প্যানেল দ্বন্দ্ব, পদত্যাগ করে বাগছাস নেতার মিষ্টি বিতরণ

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই : বেবিচক চেয়ারম্যান

‘আ. লীগ বিদ্যুৎ খাতে চুরির লাইসেন্স দিয়েছিল’

আ.লীগ নেত্রী রুনু গ্রেপ্তার

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

১০

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

১১

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

১২

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

১৩

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১৪

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১৫

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১৬

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৭

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৮

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

১৯

মার্কিন বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানে রুশ হামলা

২০
X