‘স্যার এবারের জন্য হলেও আমাকে পরীক্ষা দিতে দিন, এটা আমার জীবনের শেষ পরীক্ষা। তা না হলে আমি মরে যাব স্যার! একটা সুযোগ দিন স্যার।’
এমন আঁকুতির কথা বলতে বলতেই পরীক্ষার প্রধান গেট টপকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে চান ফাহাদ ফয়সাল নামে এক পরীক্ষার্থী। কিন্তু পুলিশ তাকে বাধা দিয়ে পুনরায় গেটের বাইরে বের করে দেয়। পরে ওই পরীক্ষার্থী রাস্তায় শুয়ে পড়েন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখনো বারবার বলছিলেন, আমি মরে যাব, এই পরীক্ষা না দিতে পারলে আমি মরে যাব স্যার। আমি আর বাঁচব না।
তবে এত আহাজারির পরও ওই পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে কেন্দ্র থেকে ফিরে যান ভাঙা মন নিয়েই।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদের পেছনে থাকা মসজিদ মিশন একাডেমি পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
বিসিএস পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল সকাল ১০টায়। নিয়ম ছিল তার আধা ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। ফাহাদ ফয়সাল নামের ওই পরীক্ষার্থী কেন্দ্রের সামনে এসেছিলেন ৯টা ৪০ মিনিটে। তাই তাকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এতেই ফাহাদের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
এই কষ্টে তিনি কেন্দ্রের সামনেই চিৎকার করে কেঁদেছেন। রাস্তায় মাথা ঠুকরে গড়াগড়ি খেয়েছেন আজ। তবুও মন গলেনি কারও।
৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গ্রহণকালে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে রাজশাহীর মসজিদ মিশন একাডেমি কেন্দ্রের সামনে তাই এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। ফাহাদ ফয়সালের বাড়ি নওগাঁ জেলায়।
তিনি যখন কেন্দ্রের সামনে আসেন তখন ৯টা ৪০ মিনিট। এরইমধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফাহাদ এসে পুলিশকে অনুরোধ করেন তাকে ভেতরে ঢোকানোর জন্য। কিন্তু পুলিশ রাজি হয়নি।
পরে প্রধান ফটক টপকে ফাহাদ ভেতরে ঢোকেন। তখন ভেতর থেকে পুলিশ তাকে বের করে আনে। পরীক্ষায় বসতে না পেরে ফাহাদ রাস্তায় মাথা ঠুকতে থাকেন। আহাজারি শুরু করেন। রাস্তায় গড়াগড়ি খান। এ সময় ওই রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকার পর ফাহাদ সেখান থেকে উঠে চলে যান। পরে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক নূর আহমেদ মাছুম বলেন, কয়েক দিন আগে তাদের চেয়ারম্যান সকল কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিং করেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ না করলে তাকে যেন আর ঢুকতে দেওয়া না হয়। তাই সেই নির্দেশনাই আজ পরীক্ষা গ্রহণকালে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই এমনটি হয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নন। ওই পরীক্ষার্থীরই সময়মতো আসা উচিত ছিল বলে জানান।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর ২৯টি কেন্দ্রে শুক্রবার বিভাগের আট জেলা থেকে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩১ হাজার ৯৪৭ জন। এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন ২৪ হাজার ১১৮ জন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। তবে পরীক্ষা চলাকালে শাহ মখদুম কলেজ কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া অন্য কেন্দ্রেগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন