‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে, আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’। ‘রেশমি চুড়ির তালে কৃষ্ণচূড়ার ডালে/পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা ডেকে ওঠে পাপিয়া।’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ দুই মনোমুগ্ধকর গানে আমরা উপলব্ধি করি কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানেও কৃষ্ণচূড়ার দর্শন পাওয়া যায়। তিনি লিখেছিলেন, ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী/কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী।’
শিমুল-পলাশ ফোটা ঋতুরাজ বসন্তের দিন পেরিয়ে গ্রীষ্মের পুষ্প উৎসবে ডানা মেলেছে আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের এ পুষ্প উৎসবে প্রকৃতির ভাঁজে ভাঁজে ডানা মেলেছে মনোহর জারুল, স্বর্ণাভ সোনালু, মধুমঞ্জরী ও কাঠগোলাপের মতো পরিচিত-অপরিচিত অনেক ফুল। তবে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উদ্ভাসের কাছে ম্লান হয়ে গেছে সব রঙের ফুল।
কৃষ্ণচূড়ায় রুপের ছোঁয়া পড়েছে প্রকৃতির পথে-প্রান্তরে। রোদের দাপটে পুড়া প্রকৃতিতে যেন আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে এ ফুল। এমন রোদে কৃষ্ণচূড়ার আবির নিয়ে প্রকৃতি সেজেছে বর্ণিল রূপে। যেন প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম বর্ণের উৎসব চলছে। মাথার ওপর লাল সবুজের চাদোয়া, পায়ের নিচে ঝরা ফুলের বিছানা। যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও চলার পথে ক্ষণিক থমকে তাকান।
এ গ্রীষ্মে নানা রঙের ফুলের সাজে সেজেছে নাটোরের প্রকৃতি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে পথিকের মন কেড়ে নেয় পথে-প্রান্তরের ফুটে থাকা আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়ার সমাহার। এ যেন চমৎকার রূপ, যেন কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন লেগেছে। কৃষ্ণচূড়ার যখন ফুটে এই প্রকৃতির বুকে, তখন সব বাঙালির হৃদয়ে দোলা দেয়। প্রখর রোদে যেন এক প্রশান্তি এনে দেয় কৃষ্ণচূড়া।
বৈশাখ মাস কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময়। এ সময় বাংলাদেশের সব জায়গায় কৃষ্ণচূড়া ফোটে। এ সময়ে দেশের গ্রাম কিংবা শহরে কৃষ্ণচূড়া ফুটতে দেখা যায়। অনেক দেশেই কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে। তবে ফুল ফোটার সময়কাল এক নয়, দেশ ভেদে এটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ফুটে।
কৃষ্ণচূড়ার মূল আবাস মাদাগাস্কার হলেও ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া কোস্টারিকা, পানামাসহ মধ্যম তাপমাত্রার দেশেও এর উপস্থিতি দেখা যায়।
ভারত বর্ষে সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন ভিন্ন সময়। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম -ডেলোনিক্স রেজিয়া। যা ফ্যাবেসি পরিবারের অন্তর্গত। ইংরেজিতে এটি পরিচিত ফ্লেম ট্রি হিসেবে পরিচিত।
পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কৃষ্ণচূড়া পরিচিত 'গুলমোহর' নামে।
মন্তব্য করুন