রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে কৃষি ও ফসলি জমির মাটি। মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির ফলে উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের একটি বিলেই রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক পুকুর। সরকারি খাল-ডোবা নালা, আবাদি জমির মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কাটার ফলে যত্রতত্রে পুকুরে সয়লাব। এসব জমির বেশিরভাগই ধানের জমি। এতে দিন দিন কমছে চাষাবাদের জমি। ফলে হ্রাস পাচ্ছে ফসল উৎপাদন।
অন্যদিকে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটা গ্রাস করে নিচ্ছে ফসলি জমি। বৈধ-অবৈধ ইটভাটাগুলো এখন কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে ইট ভাটার আশপাশে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। মাটিখেকোদের খপ্পরে পড়ে জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়, পুড়ছে আগুনে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের আমির হোসেন ডিপজলের ইটভাটার পেছনে দেহলা ও সমেষপুর কৃষি জমির এমন অবস্থা দেখা গেছে।
পুরো ফসলি জমির মাঠজুড়ে বিশাল বিশাল পুকুর। এসব পুকুরের কারণে কোনো ধরনের ফসল ফলানো স্থানীয় কৃষকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে উক্ত বিলে ৩০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন, প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ, গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্বারকলিপি প্রদান, সাংবাদিক সম্মেলন করে আসলেও বন্ধ হয়নি মাটি কাটা।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫টি অবৈধ ট্রলি ও ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী আল মদিনা ও জেবিএম ইটভাটায়।
আবদুস সালাম, কালা মিয়া, রাজা মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, ভোলাকোট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহম্মদ মানিক, আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল পাটোয়ারী, ইটভাটা মালিক আমির হোসেন ডিপজল, জাহাঙ্গীর কোম্পানি, সিরাজ মিয়াসহ মাটি ব্যবসায়ী এই চক্রটি জমি কিনে নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে মাটি নিয়ে যায়। এতে পার্শ্ববর্তী জমির মাটি ভেঙে পুকুরে পড়ে। পাশের জমির মালিক বাধ্য হয়ে মাটি খেকোদের কাছে অল্প দামে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেক কৃষককে জমির মাটি বিক্রিতেও বাধ্য করা হয় কখনো কখনো। নামমাত্র মূল্যে ২ বা ৩ ফুট কাটার কথা বলা হলেও অল্প কদিনেই ভেকু মেশিন দিয়ে কোথাও কোথাও তা ৪০/৫০ ফুট গভীর করে মাটি নিয়ে যায়।
সিরাজ নামের এক কৃষক জানান, সমস্ত মাঠটাকে যেভাবে ধ্বংস করে ফেলছে, আমরা কৃষক কিভাবে চাষাবাদ করবো, কি খাবো।
শাহ আলম নামের আরেক কৃষক জানান, পুরো মাঠজুড়ে পুকুর। পুকুরের কারণে নিজের জমিতেই যাওয়া যায় না। কিছু কিছু জমির ধান পেকে আছে অথচ ধান কেটে কীভাবে আনব-নৌকায় করেও আনা সম্ভব নয়।
ভোলাকোট গ্রামের দেহলা, শাহারপাড়া, শাকতলা ও ভাদুর ইউনিয়নের সমেষপুর ও সিরুন্দিসহ ৫ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক যুগ যুগ ধরে এ মাঠে চাষাবাদ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কয়েক বছর আগে থেকেই এ মাঠটি মাটি খেকোদের কুনজর পড়েছে। এখন চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বেশিরভাগ কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।মাটিকাটায় অভিযুক্ত দুলাল পাটোয়ারী জানান, সবাই কাটে-আমরা কাটলে দোষ হয়। আপনারা আসছেন, আপনারা নিউজ করেন, আমরা আমাদের কাজ করি।
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, আমি অসহায়। মাটি কাটা বন্ধে আমার কিছু করার নেই। আপনারা নিউজ করে দেখেন কিছু করতে পারেন কিনা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শারমিন ইসলাম জানান, সর্বশেষ মাসিক সভায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। মাটি কাটা রোধে সরকারি সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন