চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে যখন হাসফাস। এমন অবস্থায় স্বস্তির বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাপিত্যেশ। কাঠফাঁটা রৌদ্দুরের ভ্যাপসা গরম থেকে কিছুটা প্রশান্তি পেতে এক পশলা বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় দিন কাটে সবার। বৃষ্টি নেই তাই অতিষ্ঠ গরম থেকে রেহাই পেতে বৃষ্টি চেয়ে দেশজুড়ে চলছে ইসতিসকার নামাজ। বৃষ্টির কামনায় দু-হাত তুলে কান্নায় চোখ ভাসিয়েছেন অনেকেই। তবে এ মুহূর্তে বৃষ্টি চাইছেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধানচাষিরা।
মাঠে সোনালি ফসল। সে ফসল ঘরে তোলার পর বৃষ্টি এলেই ভালো বলে মনে করছেন কৃষকরা। আরও সপ্তাহ-দশদিন বৃষ্টিহীন থাকলে কৃষক ঘরে তুলতে পারবে তার সোনালি ফসল। তাই এমন দাবদাহে কষ্টের বদলে এক ধরনের স্বস্তি আছে তাদের মাঝে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৯১ হেক্টর বেশি। আর এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৩ টন ধান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
জেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চলসহ উজানে থাকা জমিতে গিয়ে দেখা যায়- তীব্র দাপদাহ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটছেন কৃষক। আর কৃষাণিরা কেটে আনা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। ঘাম ঝরিয়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে না হয় আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবুও বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি চান না তারা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় এখনো পর্যন্ত ভালো ফলনের আশা করছেন। এমন অবস্থায় বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি হলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এ ছাড়াও বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল এলে হাওরাঞ্চলের নিচু এলাকার জমি তলিয়ে যাবে। এতে কৃষকরা বিপাকে পড়বেন। শুধু তাই নয় ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত শ্রমিক, সার, কীটনাশক ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। তাই সব মিলিয়ে রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই খুশি তারা।
কৃষক রুবেল মিয়া জানান, হাওরের ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। উজানের কিছু ধানি জমি আছে এগুলো কাটতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময়টাতে বৃষ্টি না হলে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তিনি। যদি এর মধ্যে বৃষ্টি হয় তাহলে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে জানান।
নাসিরনগর উপজেলার দাতমন্ডল গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, চলতি মৌসুমে পাঁচ কানি জমিতে নতুন জাতের বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো। প্রতি কানি জমিতে ২১ মণ ধান হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা কষ্টের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টি আমরাও চাই, তবে আর কিছুদিন পর। এমন রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ যেন আরেকটা দিন থাকে। তাহলে আমাদের ফসল ঘরে তুলতে পারব। তীব্র গরমে ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায় না। যাদের পাচ্ছি তাদের প্রতিদিন ৭শ টাকা করে দিয়ে ধান কাটাচ্ছি। কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে সামনে ঝড় বৃষ্টি আসতে পারে। তাই পাকা ধান কাটতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি জমি সোনালি ফসলের আভায় মুখরিত। তবে কৃষকের কষ্টের ফসল যাতে ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার, মাঠকর্মীসহ বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও প্রচারের মাধ্যমে ৮০ ভাগ ধান পেকেছে এমন ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ। আশা করছি ৩-৪ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। এ ছাড়াও উজানে যেসব জমি রয়েছে এর মধ্যে ২৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সেগুলো চলতি মে মাসের মধ্যেই কাটা শেষ হবে।
মন্তব্য করুন