স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ২০ম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার (৭ মে) সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ স্মরণিকাও প্রকাশ করা হয়।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের স্মৃতিচারণা করে বলেন, সেদিন নির্মমভাবে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হলো। তখন হত্যাকারীদের বিচার হলো না! কী কারণে বিচার হলো না? হত্যাকারীদের রায় কেন হচ্ছে না? আমার বোধগম্য নয়! তবে আমাদের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ এ হত্যাকারীদের শাস্তি চায়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আহসান উল্লাহ মাস্টার বিএনপির জোট সরকারের দুঃশাসনের আমলে কখনো লড়াই সংগ্রামে পিছপা হননি। তিনি জনগণের নেতা ছিলেন। জনগণকে সাথে নিয়ে সবকিছু মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন এবং শহীদ হয়েছেন। আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো ত্যাগী নেতাদের পুরো দেশজুড়ে প্রয়োজন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতেন প্রয়াত এমপি শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার। আমরা এমন একজন মানুষকে হারিয়েছি যিনি একজন সৎ মানুষ ছিলেন সেই সাথে একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। বর্তমানে এমন আদর্শবান নেতা পাওয়া কঠিন।
স্মরণসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি তার বাবার খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানান। তিনি বলেন, এ রায় কার্যকর হলে গাজীপুরবাসী কলঙ্কমুক্ত হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভাত এবং ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন ভাত এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াইয়ের ডাক দিলেন। আহসান উল্লাহ মাস্টার সেদিন ভাত এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে উজার করে দিলেন। দাঁড়ালেন শ্রমিক তথা এই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের পাশে।
বিশেষ অতিথি টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী অনেক রাজনীতিবিদ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অঙ্গীকার সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার তার ব্যতিক্রম। জীবনভর শুধু মেহনতী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার তার কর্মের মাধ্যমেই চির জাগরূক থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।
আয়োজনে অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) মো. আব্দুল কাইয়্যূম বিপুল বলেন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সততা, দেশপ্রেম বর্তমান যুব সমাজের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসা তাকে গাজীপুরের সর্বস্তরের মানুষের নেতায় পরিণত করেছিল। মানবসেবায় জীবনভর তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা থেকে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
স্বরণসভায় অন্যদের মধ্যে গাজীপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্যাহ খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মণ্ডল বক্তব্য দেন। এ সময় জেলা যুব লীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াছ, পূবাইল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ জাহিদ আল মামুন, স্বেচ্ছা সেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা মশিউর রহমান সরকার বাবু, টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শরিফুল হাসান খান প্রমুখসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আমন্ত্রিত অতিথিরা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরবর্তীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মন্তব্য করুন