যে কোনো ফুলই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে তার নিজস্ব সৌন্দর্যে। ফুল ভালোবাসেন না এ রকম একজন মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফুলে দৃষ্টি পড়লেই মানুষের মনের ভেতরেও একধরনের পরিবর্তন ঘটে। এ রকমই চোখ জুড়ানো ফুল পটপটি। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মেঠোপথের দুপাশে ফুটে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চোখ জুড়ানো ফুল পটপটি।
স্থানীয়দের কাছে এটি পটপটি ফুল নামেই পরিচিত। পটপটি একটি বুনো ফুল। এর ইংরেজি নাম রুয়েলিয়া টিউবেরোসা । এটি অ্যাকান্থেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ফুলের রং হালকা বেগুনি। দেখতে অনেকটা ঢোল কলমি ফুলের মতো। এ উদ্ভিদ যেখানে জন্মে সেখানে এক সঙ্গে অনেকগুলো জন্মে। পটপটি সকালে ফুটে আর দুপুর হলেই আস্তে আস্তে ঝরে পড়ার প্রহর গুনতে থাকে। পটপটি সড়কের পাশে, পতিত জমি, ঝোপঝাড় ও বাড়ির আশপাশে যত্ন ছাড়াই জন্মায়। পটপটি বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মেঠোপথ, পতিত জমি, ঝোপঝাড় ও বাড়ির আশপাশে প্রকৃতিকে হালকা বেগুনি রঙের পটপটি ফুল ফুটে আছে। আসা-যাওয়ার পথে এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই। পটপটি ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতিও যেন রঙিন হয়ে উঠেছে। সবুজের মাঝখানে ফুটে থাকা ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেকোনো মানুষকেই ফুলপ্রেমী করে তুলছে। মেঠোপথের পটপটি ফুলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন বাগানের ফুলের সৌন্দর্যকেও হার মানায়।
জানা গেছে, পটপটি (রুয়েলিয়া) একধরনের ভেষজ উদ্ভিদ। এর রয়েছে ঔষধি গুণ। এ গাছের ফুল, পাতা ও শিকড় মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ উদ্ভিদের শিকড় মূত্রনালির পাথর অপসারণে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ফুলের রস খেলে গ্যাস্ট্রিক নিরাময় হয়। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফুলের নির্যাস গনোরিয়া রোগে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া সবুজ পাতার রস কণ্ঠনালির রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইমতিয়াজ হাসান উজ্জ্বল কালবেলাকে বলেন, পটপটি ফুল আমাদের এলাকার বিভিন্ন মেঠোপথের ধারে ও পুকুর জলাশয়ের পাড়ে ফুটে থাকতে দেখা যায়। এ ফুলটি দেখতে অনেকটা মাইকের মতো। সামনের অংশ প্রশস্ত ও গোড়ার দিকটা সরু। হালকা বেগুনি রঙের এ ফুলটি আমাদের গ্রামীণ পরিবেশের শোভাবর্ধন করছে।
স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা রেহেনা পারভিন বলেন, ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। যেকোনো ফুলই মানুষকে আকৃষ্ট করে। আমাদের গ্রামীণ পরিবেশে অনেক ধরনের বুনো ফুল রয়েছে, এসব ফুলের মধ্যে অন্যতম একটি ফুল পটপটি। এ ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত না হওয়ার উপায় নেই।
ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, পটপটি একটি ঔষধি গাছ। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদ গ্রামীণ পরিবেশের যেকোনো জায়গায় জন্মাতে পারে। এসব উদ্ভিদ দলবদ্ধভাবে হয়। এ উদ্ভিদের রয়েছে ভেষজগুণ। মানুষের নানা রোগে পাতা, ফুল ও শিকড় ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভেষজ ঔষধের পাশাপাশি এটি আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্যবর্ধনেও ভূমিকা রাখছে।
মন্তব্য করুন