বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল থেকে ৩ দফা দাবিতে এ ধর্মঘটের কারণে রোগী পরিবহনে যেমন ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি মরদেহ নিয়েও অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে স্বজনদের।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের এক চালক ও তার সহকারীকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা এবং তার অ্যাম্বুলেন্সের জরিমানা করার প্রতিবাদে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি শজিমেক হাসপাতাল শাখা এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি শজিমেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সোমবার (২৭ মে) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রোগী নামিয়ে দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও তার সহকারীকে মারধর করা হয়। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে হাতকড়া পরিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে ট্রাফিক আইনে ওই অ্যাম্বুলেন্সের দেড় হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তারা ছাড়া পান।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স না থাকার কারণেই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি সেবা প্রদান করে। তাদের এভাবে হেনস্তা করার প্রতিবাদে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।’
তাদের ৩ দফা দাবি হলো- হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের রোগী পরিবহনের সুবিধা দেওয়া, হাসপাতালের ভেতরে বৈধ অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মারধরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করা।
জরিমানা দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স চালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাতে একজন রোগীকে অক্সিজেনসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নামিয়ে দিতে গেলে কিছুটা দেরি হয়। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক সেখানে পৌঁছে সিকিউরিটি গার্ড ডেকে আমাদের আটক করতে বলেন। তারা আমাদের আটক করে মারধর করে পুরে পুলিশে সোপর্দ করে। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে ট্রাফিক আইনে দেড় হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রাতে আমরা ছাড়া পাই।’
শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরের অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তারা হাসপাতালে এসে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার তাদের সতর্ক করা হয়েছে। সোমবার এমন একটি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং অবস্থায় দেখে পুলিশ সেটি আটক করে জরিমানা করেছে। সেখানে কাউকে আটক করা বা মারধরের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ধর্মঘট চলছিল সে সময় অনেক রোগীকে স্থানান্তর এবং সদস্য ছাড়পত্র পাওয়া রোগীদের বাড়ি নিয়ে যেতে তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। কোনো অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে তারা অটোভ্যান এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশায় হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এদিকে সকালে বগুড়ার শেরপুর এলাকার এক রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বিকেল পর্যন্ত লাশ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন সেখানে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত তারেকুল ইসলামের বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এভাবে কতক্ষণ গাড়ির অভাবে বসে থাকতে হবে তা বলতে পারছি না।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক আবুদল ওয়াদুদ বলেন, ‘বাইরের অ্যাম্বুলেন্স যদি রোগী বা লাশ পরিবহন না করে সেক্ষেত্রে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়েই সে কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
বগুড়া স্টেডিয়াম ফাঁড়ির ইনচার্জ মিলাদুন্নবী বলেন, আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের রাতেই ছেড়ে দিয়েছি।
মন্তব্য করুন