শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
পুলিশের সোর্স বেদু হত্যার ৩ বছর

দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী দিলেও মিলছে না বিচার

পুলিশের সোর্স আব্দুল মান্নান বেদু। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশের সোর্স আব্দুল মান্নান বেদু। ছবি : সংগৃহীত

শেরপুরের আলোচিত পুলিশের সোর্স আব্দুল মান্নান বেদু নিখোঁজের তিন বছর পার হলেও মিলেনি তার সন্ধান। ২০২১ সালের ১৪ মার্চ নিখোঁজ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো জীবিত বা মৃত সন্ধান করতে পারেনি তাকে।

অপরদিকে তার পরিবারের দাবি, এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিদের তথ্য দিয়ে বার বার পুলিশকে ধরিয়ে দেওয়ায় হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছেন বেদু।

সেই মাদক কারবারিদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ায় বেদু হত্যায় অংশ নেওয়া কছিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তার দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ঘটনার বর্ণনা করেছেন স্থানীয়দের কাছে। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ও বেশকিছু অডিও ক্লিপ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার সেই মাদক কারবারিরা কছিম উদ্দিনকেও করেছে হত্যার পরিকল্পনা।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করলেও কোনো মামলাই নেয়নি পুলিশ। পরে নিখোঁজ বেদুর ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শেরপুর বিজ্ঞ সি আর কগনিজেন্স কোর্টে ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি পিবিআইয়ের তদন্তাধীন থাকলেও মামলার রাজসাক্ষী কছিম উদ্দিনের জবানবন্দি গ্রহণে নেওয়া হচ্ছে না আদালতে। এই সুযোগে চক্রটি নানা চাপ ও হত্যার মতো হুমকি দিচ্ছে কছিম উদ্দিনকে। তবে পিবিআইয়ের দাবি, মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবন, ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহে জড়িত। অপরদিকে নিখোঁজ আব্দুল মান্নান বেদু পুলিশের সোর্স ছিলেন। মামলার প্রধান আসামি খোকা শিকদার সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি মাদক মামলায় কয়েকবার পুলিশের কাছে আটক হয়ে হাজতে যান। এরপর থেকেই তাকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র করে চক্রটি। কয়েকবার তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেও ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ রফিক নামের এক ব্যক্তি তাকে ডেকে নিয়ে সংঘবব্ধভাবে হত্যা করে।

এ ঘটনায় ২০২১ সালের ২০ মার্চ তার স্ত্রী সবুজা বেগম শেরপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর তদন্তে আর কোনো অগ্রগতি নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেদু হত্যার বিষয়ে একটি ভিডিও ও কিছু অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একই গ্রামের ছামির উদ্দিনের ছেলে মো. কছিম উদ্দিন (৩৭), মৃত হোসেন আলীর ছেলে খোকা মেম্বার (৪৮), খোকা মেম্বারের ছেলে মো. ইসরাফিল সম্রাটকে (২৭) জড়িত সন্দেহে সদর থানার পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত জেলহাজতে পাঠায়।

মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্বশত্রুতার জের ধরে আমার বাবাকে হত্যা করেছে চিহ্নিত মাদককারবারিরা। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া একজনের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য ও ঘটনার বর্ণনা করা গোপন রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় এবং দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করায় তারা মরদেহ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে আমি বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছি। পিবিআইয়ের দপ্তরে গিয়ে রাজসাক্ষীকে বার বার ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাকে কেনো আদালতের সামনে নিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে না, এটা আমার বোধগম্য নয়। আমার পিতার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

রাজসাক্ষী কছিম উদ্দিন বলেন, আমাকে টাকার লোভ দেখিয়েছিল। তাই লোভে আমি তাদের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলাম। বেদুকে গলায় ফাঁস দেওয়ার সময় তাদের নির্দেশে আমি তার পা ধরে রেখেছিলাম। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছেলে আমাকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে একটি মিথ্যা বয়ান মোবাইলে রেকর্ডও করিয়ে নিয়েছে, যেন ঘটনাকে আড়াল করা যায়। আমি ঘটনার বর্ণনা পুলিশ ও এলাকাবাসীকে দিয়েছি। আমি ভুল করেছি এর জন্য আমি শাস্তি পেতে রাজি আছি। তবে আমি সবার বিচার চাই।

এ বিষয়ে ভাতশালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার বলেন, বেদু পুলিশের সোর্স ছিল। মামলার অভিযুক্ত খোকা মেম্বার আমার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত এবং মাদকসহ কয়েকবার তিনি পুলিশের কাছে ধরা পড়েছেন। তার জের ধরে বেদুর সঙ্গে ঝামেলা চলছিল।

এ ব্যাপারে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল জানান, হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিদের আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করালে হত্যা রহস্যের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে। এ ছাড়াও ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য আছে।

শেরপুর সদর থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, আমরা ঘটনা তদন্তে অভিযোগে উল্লিখিত স্থানে ভেকু দিয়ে মাটি খনন করে মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে স্থানে মরদেহের হদিস পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে পিবিআই তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এ ব্যাপারে জামালপুরের পিবিআই পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দীন বলেন, এটা একটি কোর্ট পিটিশন মামলা। আমাদের কাছে মামলাটি আসার পর আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। শিগগিরই আমরা এই মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারব।

এ ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান আসামি খোকা মেম্বার ও তার ভাই মো. খলিল বলেন, আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

স্ট্রোক করে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

চলন্ত ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতাকে হত্যা

আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গ্রেপ্তার ২৪

বস্তিবাসীর জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস আমিনুল হকের

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

তিন মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি গ্রেপ্তার

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে : ডা. শাহাবুদ্দিন

১০

‘যারা কাসেমীর ফাঁদে পড়েছ, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো’

১১

ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা বাংলাদেশের

১২

বৃহত্তর নোয়াখালী নারী কল্যাণ সংঘ ইতালির আত্মপ্রকাশ

১৩

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের

১৪

‘হাসিনার কালো আইন বাতিল করুন, না হয় নিবন্ধন দিন’

১৫

বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

১৬

আহত শিশুকে নেওয়া হলো হাসপাতালে, সড়কে পড়ে ছিল বিচ্ছিন্ন হাত

১৭

বিএনপির দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৮

যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের ২ সদস্য বরখাস্ত

১৯

দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রাণ গেল ২ বন্ধুর

২০
X