‘বাপ-দাদারা জুতা সেলাই করতেন, তাদের পরে আমিও একই পেশায় কাজ করছি। এই পেশায় কাজ করে পাঁচ সদস্যের পরিবার এখন আর চলে না। মানুষের এখন টাকা হয়ে গেছে। কেউ ছেঁড়া জুতা সেলাই করে পায়ে দেয় না। এখন পর্যন্ত আমি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাই না।’
কথাগুলো বলছিলেন ইসলামপুর বাজারের মুচি সম্প্রদায়ের সাধু চন্দ্র দাস। ৫০ বছর ধরে জুতা সেলাই পেশায় রয়েছেন তিনি। সাধু চন্দ দাস আরও বলেন, ‘ঈদের সময় কিছু লোক এসে ছেঁড়া জুতা সেলাই ও কালি করেন। তখন আমি কয়টা টাকা-পয়সা পাই, পরে আর কেউ আসেন না।’
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় তার মতো এমন আরও অনেকেই আছেন, যারা ছেঁড়া জুতা সেলাই করে চলার উপযোগী করে দেন। বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনোরকম চলছে তাদের জীবন।
উপজেলার ইসলামপুর বাজারের মুচি সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানান, তাদের অনেকেই এখন এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। সারা দিন কাজ করে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এই টাকায় সংসার চালানো কঠিন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মুচি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা ছোটবেলা থেকে মুচি হিসেবে কাজ করে আসছেন কিন্তু এখন অন্যকোনো কাজ করতে পারে না, কেবল তারাই এই পেশা ধরে রেখেছেন। তবে তাদের বেশিরভাগই চান না সন্তানরা এই কাজ শিখুক। কারণ এই পেশায় কাজ করে সংসার চালানো বেশ কষ্টসাধ্য।
মুচি অধির চন্দ্র ইশি বলেন, ৪৫ বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। সারা দিন কাজ করে বাড়িতে যাওয়ার সময় চাল ডাল নিয়ে যেতে পারি না।
ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মুচি একটি অবহেলিত সম্প্রদায়। পুরাতন জুতার মেরামত করেই চলে তাদের সংসার। আধুনিকতার যুগে তাদের পেশা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।
তিনি আরও বলেন, তারা যে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা তারা পান না তা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তাদের বলবেন আমার অফিসে এসে দেখা করতে। তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন