দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আর্থিক অনিয়ম ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকায় সিকদার গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার, তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার, তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি ও সিকদার গ্রুপের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ১৮৯টি দেশি ও ১৪টি বিদেশি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে অনুসন্ধানী দলের সদস্য কামিয়াব আফতাহি উন নবী অবরুদ্ধের আবেদন করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
অবরুদ্ধ হওয়া দেশি একাউন্টগুলোর অন্য মালিকরা হলেন, জয়নুল হকের ছেলে রন হক সিকদার, মমতাজুল হক, নাতি মোহতাসিম বিল্লাহ খান, নাসিম সিকদার, শন হক সিকদার, নাতনী মেন্ডি খান সিকদার, লিসা ফাতেমা হক, পারভীন হক সিকদার, মনিকা সিকদার খান, জেফরি খান সিকদার, নাতিন জামাই সালাহউদ্দিন খান ও সিকদার গ্রুপের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব হিসাবে ১ কোটি ১১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৬ টাকা রয়েছে।
বিদেশি একাউন্টগুলো মধ্য ১২টি ন্যাশনাল ব্যাংকে আর দুটি কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সাইলন। এসব হিসাবের মালিক, জয়নুল হকের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার, ছেলে দীপু হক, জন হক সিকদার, নাতী নাসিম সিকদার, শন হক সিকদার নাতনী জেফরি খান সিকদার, জোনাস খান সিকদার, লিসা ফাতেমা হক, মনিকা সিকদার, পারভীন হক সিকদার, নাতি জামাই সালাউদ্দিন খান। এসব হিসাবে ২৭ লাখ ১৮ হাজার ৯২৭ ডলার রয়েছে।
দুদকে আবেদনে বলা হয়েছে, সিকদার গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থিক অনিয়ম ও মানিলন্ডারিং অপরাধের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক ৭ সদস্য বিশিষ্ট টিম গঠনের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সিকদার গ্রুপ এবং তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অস্থাবর সম্পদসমূহ অন্যত্র বিক্রয়/বন্ধক/বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অবিলম্বে এখন পর্যন্ত হদিস পাওয়া অস্থাবর সম্পদ তথা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সিকদার পরিবারের সদস্য এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের মালিকানাধীন/স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সাসপেন্ডেড ১৮৯টি দেশীয় মুদ্রায় পরিচালিত হিসাব এবং ১৪টি বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত হিসাব মিলিয়ে মোট ২০৩টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে বর্তমানে সিকদার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য বিদেশে অবস্থান করছেন। বিদেশে থেকে তারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অস্থাবর সম্পদসমূহ বিক্রি স্থানান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। যেহেতু সিকদার পরিবারের সদস্য এবং তাদের নিকট আত্মীয়দের নামে অর্জিত উক্ত অস্থাবর সম্পদসমূহ শেয়ারগুলো বিক্রি/স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেহেতু ব্যাংক হিসাবসমূহ অবিলম্বে আদালত কর্তৃক অবরুন্ধ করা একান্ত আবশ্যক।
এর আগে গত ৯ মার্চ জয়নুল হক ও তার পরিবারের ৪২টি বিও একাউন্ট জব্দের আদেশ দেয় আদালত। দুদিন পর ১১ মার্চ জয়নুল হক সিকদার পরিবারের ১৪ সদস্যর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ২১ এপ্রিল সিকদার গ্রুপের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১৯ নং সেক্টরে ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জয়নুল হক সিকদার মারা যান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মালিক তার সন্তানরা।
মন্তব্য করুন