আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার আনুষ্ঠানিক চার্জ দাখিল হবে আগামীকাল রোববার। কোর্ট প্রসিডিংস বিটিভির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে।
শনিবার (৩১ মে) বিষয়টি জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
তিনি জানান, যখন এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার শুনানি হবে, তখন বিটিভির মাধ্যমে তা সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে।
এর আগে ১২ মে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে আসে। রোববার সেই প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিক উপস্থাপন করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ওই দিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই বিপ্লবের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্তপূর্বক তদন্ত সংস্থা অপরাধের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সেখানে মোট তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত শুরুর ৬ মাস ২৮ দিনের মধ্যে প্রধান মাস্টারমাইন্ড ও সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রাথমিকভাবে তার (শেখ হাসিনার) বিরুদ্ধে মূলত ৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। জুলাই গণহত্যার ঘটনায় সব হত্যাকাণ্ডের সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি শেখ হাসিনার। তিনি এ গণহত্যা ও হত্যার উসকানিদাতা, প্ররোচনাদাতা ও সরাসরি নির্দেশদাতা। এ বিষয়ে তার বহু কল রেকর্ড, অডিও-ভিডিও পাওয়া গেছে।
৫টি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগটি হচ্ছে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের উসকানি দিয়েছেন ও প্ররোচনা দিয়েছিলেন ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। যেখানে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতিপুতি এসব বলেছিলেন। এসব বলার মাধ্যমে তাদের (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অর্থাৎ সহযোগী বাহিনী হিসেবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের) হত্যা করে আহত করে অন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, দ্বিতীয় যে অভিযোগটি করা হয়েছে সেটা হচ্ছে, সরাসরি নির্দেশ। তদন্ত সংস্থার তদন্তে শেখ হাসিনা কিছু টেলিফোন কনভারসেশন জব্দ করেছেন। সেখানে তিনি বারবার সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসিসহ মরণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারী সিভিলিয়ান (নাগরিক) যারা দেশে একটা ন্যায় সঙ্গত দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রত ছিল তাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন ও নির্মূল করার জন্য।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এছাড়া বাকি ৩টি অভিযোগ সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে। যেখানে শেখ হাসিনার নির্দেশের প্রেক্ষিতে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়েছে। কিভাবে মানুষকে মারা হয়েছে, নৃশংসতাগুলো করা হয়েছে সেব্যাপারে সুনিদ্দিষ্ট ঘটনাকেন্দ্রিক ওই ৩টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যত লোক মারা গেছে, যত লোক আহত হয়েছে প্রত্যেকটার ব্যাপারে তার (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে চার্জ রয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, প্রতিবেদনে এসেছে প্রায় দেড় হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে, ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করা হয়েছে, নারীদের ওপর বিশেষভাবে সহিংসতা চালানো হয়েছিল, লাশ একত্রিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল, পোস্টমর্টেম করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল, ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে শেখ হাসিনা নিজে গিয়ে বলেছিলেন, এসব ভর্তি রোগীকে যাতে চিকিৎসা দেওয়া না হয়। রোগীরা যখন যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চেয়েছিল তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাতে পচে গেলে কেটে ফেলতে হয় সেরকম নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের বিষয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আন্দোলকারীদের ওপর দায় চাপানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় নিজেদের লোকদের দিয়ে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
মন্তব্য করুন