শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামিদের শাস্তি দিতে না পারলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি অবিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে যুক্তি উপস্থাপনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জুলাই মাসের হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আসামিদের দণ্ড প্রদান না করা হয় তাহলে শহীদ ও আহতদের প্রতি অবিচার করা হবে।
এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রসিকিউশন। এরপর ট্রাইব্যুনাল জানান, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং দুই পক্ষই যে কোনো মূল্যে ন্যায়বিচার পাবেন।
এদিন আলোচিত মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তি খণ্ডনের পর সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণহত্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের দিন নির্ধারণে ১৩ নভেম্বর ধার্য করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ তারিখ ঘোষণা করেন।
পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর আদালত রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য ধার্য করা হয়েছে। সেদিন আদালত জানাবেন সংক্ষিপ্ত কত দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর টানা পঞ্চম দিনে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। পরে সেদিনই আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরবর্তীতে ২০ অক্টোবর শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকালে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমীর হোসেন তাকে নিরপরাধ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও সাক্ষ্য দিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তবে মামলার মূল দুই আসামি পলাতক থাকায় তারা কোনো সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ পাননি।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। এ ছাড়া সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন