কারাবন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন স্বজনরা।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে বিএনপির গুম-খুন ও গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের স্বজনদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে চারজনের একটি প্রতিনিধি দল আদালতে স্মারকলিপি নিয়ে যায়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে বিচার বিভাগকে রক্ষা করা, স্বাধীন ও ন্যায় বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আপনি অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান দমনপীড়ন, মিথ্যা, গায়েবি, হয়রানিমূলক মামলায় গণগ্রেপ্তার, রিমান্ডে পুলিশি নির্যাতন, ঢালাও সাজা প্রদান, জামিন প্রদান না করার বিষয়ে আপনার উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমাদের অনুরোধ, গণগ্রেপ্তারকৃত বিএনপি ও বিরোধী মতাবলম্বী রাজনৈতিক বন্দিদের আশু মুক্তির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদালতগুলোর প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।
এর আগে মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বক্তব্যে বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আজকে এই সরকারে আমলে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। আজকে বাবাকে না পেয়ে ছোট শিশুরা কান্না করছে। স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রীরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের অবস্থা আজকে করুন। তবে আমরা সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমরা ক্ষমতায় গেলে আমরাও দেখব।
ঢাকা মহানগর যুবদলের নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসানের বোন আফরোজা পারভীন জেবা বলেন, আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ ১ মাস পরে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আমার পরিবার সদস্যদের গ্রেপ্তার-গুম-খুন করে সরকার তছনছ করে দিয়েছে।
বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা বেগম বলেন, রাত দুইটায় দরজা ভেঙে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমার বয়স্ক বৃদ্ধ স্বামী পুলিশকে কত আকুতি মিনতি করলাম যে বয়স্ক অসুস্থ নির্দোষ লোকটা না নিয়ে যেতে- কিন্তু পুলিশ বাসায় ভাঙচুর করে নির্দয়ভাবে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
শিরিন সুলতানা বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ তাকে কারাগারে ডিভিশন দেয়নি। তবে বলব এই সরকারের পরিণতি ভালো হবে না।
জেলখানায় নিহত বিএনপি নেতার আবুল বাশারের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীকে মেরে আমার সন্তানকে এতিম করেছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, আমার ৩ ছেলেটা ও এক ছেলের বউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয়স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ। আমি দেশে-বিদেশের বিবেকবান মানুষকে বলতে চাই; আমরা কীভাবে দিন কাটাচ্ছি, একটু চিন্তা করুন।
বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে ব্যারিস্টার তাবাসসুম বলেন, আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত! অথচ তাকে মুক্তি না দিয়ে জেলে ভরে রেখেছেন- আমার বাবার মুক্তি চাই।
সংহতি জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যেরকম মানবিক বিপর্যয় চলছে সেরকমই পরিস্থিতি দেশে বিরাজমান। উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বাংলাদেশে বিরোধীদল করা কী অপরাধ? সরকার কী বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছে? তাহলে কেনো এভাবে অন্যায় অমানবিকভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে? আজকে বিচারব্যবস্থার ওপরও সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। অথচ মানুষের শেষ ভরসা বা আশ্রয়স্থল হলো বিচার বিভাগ। আওয়ামী লীগ কিন্তু শেষ সরকার নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মৃত্যু ঘটেছে। তারা প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশি ত্রাস বন্ধ করতে আদালত রুল জারির মাধ্যমে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
আফরোজা আব্বাস বলেন, বিএনপির নেতাদের মিথ্যা মামলায় বিনাচিকিৎসায় কারাগারে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন