দীর্ঘ ২৫ বছর চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন ও ছয়জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তী এ রায় ঘোষণা করেন।
এ রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, যারা পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের অনেকেই মারা গেছেন। তাই তাদেরকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জবানবন্দি গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেটরাও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারাও পক্ষপাতদুষ্ট ও সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন।
এদিন সকালে আসামি তারিক সাইফ মামুন আদালতে হাজিরা দেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তিনি চলে যান। পরে আইনজীবী মেহেদী হাসান তার পক্ষে সময়ের আবেদন করেন। তবে বিচারক তার আবেদন নামঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা আসামি আশীষ রায় চৌধুরী আদালতে হাজিরা দেন। এ ছাড়া কারাগারে আটক আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে আদালত রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আবদুল আজিজসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দণ্ডিত অপর দুজন হলেন-আদনান সিদ্দিকী ও ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, ও আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, এ মামলার সিডি (কেইস ডকেট) পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সিডি গায়েব করা হয়েছে। আদনান সিদ্দিকী ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েন। তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন তবে তা অনেকটা গা বাঁচিয়ে দেওয়ার মতো। সোহেল চৌধুরী কোনো অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না অথচ তিনি খুন হলেন। ট্রাম্পস ক্লাবের ম্যানেজার বলেছেন, জেনেছি সোহেল চৌধুরী নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অথচ এ ঘটনায় আহত অপর একজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, এত বছর ধরে ফেলে রেখে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রতিটি মৃতের আত্মা বিচার চায়। আদনান সিদ্দিকী কয়েকজনের নাম বলেছেন নিজের গা বাঁচিয়ে। যে নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে সে অন্যের নামও সত্য বলতে পারে। তবে যাদের নাম বলছে তাদের কাছ থেকে কোনো রিকোভারি হয় নাই। তারা যে সেখানে ছিল সেটা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও যাদের নাম বলছে আদনান সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজনও যদি সেখানে না থাকে বা একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে থাকে তাহলে তার ভাষ্য অনুযায়ী আসামিদের গুরুদণ্ড দেওয়া ঠিক হবে না।
আসামি আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগপ্রাপ্ত সাক্ষ্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। বান্টির বক্তব্যে ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরীর নাম আসলেও ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি বিধায় তাদের খালাস দেওয়া হলো।
মন্তব্য করুন