কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘২০ হাজার টাকায় শিশু বিক্রি করেন মিল্টন সমাদ্দার’ 

মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত
মিল্টন সমাদ্দার। ছবি : সংগৃহীত

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার মাত্র ২০ হাজার টাকায় শিশু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন হত্যাচেষ্টা ও মানব পাচার দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আতাউর রহমান।

তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও মানব পাচার দুই মামলাতেই যে অভিযোগ ছিল তার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি। ২০ হাজার টাকায় ২ বছরের এক শিশুকে নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে বিক্রি করে দেন মিল্টন সমাদ্দার।

গত বছরের ২ মে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। সেই প্রতিবেদনে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আসা অনেক অভিযোগেরই সত্যতা মিলেছে ডিবির তদন্তে।

ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ডাক্তার না হয়েও নিজেই ছুরি-ব্লেড দিয়ে আশ্রমের অসুস্থদের কাটাছেঁড়া করেন মিল্টন। প্রয়োজনে নিজেই হাত-পা কেটে ফেলেন। ফেসবুকে ৯০০ জনের লাশ দাফন করেছেন স্ট্যাটাস দিলেও বাস্তবে দাফন করেছেন ১৫০ জনের লাশ। এ ছাড়া নিজে স্বাক্ষর দিয়ে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেটও তৈরি করেন মিল্টন সমাদ্দার। এমন সব অপরাধ আড়াল করে নিজেকে মানবতার ফেরিওয়ালা সাজিয়ে মিল্টন ফেসবুকে তার ১ কোটি ৬০ লাখ ফলোয়ারের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা আয় করেন। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে মিলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৩ টাকা।

আশ্রমের মানুষজনকে নির্যাতন করার বিষয়টিও উঠে এসেছে ডিবির তদন্তে। মতিউর রহমান মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিঠু হালদারকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির মামলায় মিল্টন সমাদ্দার ও তার হেলথ কেয়ারের ম্যানেজার কিশোর বালাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া মানব পাচারের মামলাতেও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে ফেসবুকে ফের মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মিল্টন। নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করে অনুদান চাইতেও দেখা যায় তাকে।

জালিয়াতির শুরু ছোটবেলা থেকেই : বরিশালের উজিরপুর থানার ডহরপাড়া গ্রামের সামাদিয়া দারুল উলুম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই নানা ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত মিল্টন সমাদ্দার। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে সার্টিফিকেট তৈরির অপরাধে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিল্টন একবার তার এলাকার এক ছেলেকে মারধর করে গুরুতর আহত করেন। ওই ঘটনায় তার বাবা বেদু সমাদ্দার তাকে শাসন করতে গেলে মাছ মারার টেঁটা দিয়ে বাবাকে কোপ দেন মিল্টন। পরে তিনি বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় এসে প্রথমে ওষুধ ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি। পরে নার্সিং প্রশিক্ষণ নেন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করার পর ২০১৬ সালে অসুস্থ বয়স্কদের নিয়ে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অনিয়ম ও প্রতারণা : ২০১৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেন মিল্টন। কোনো পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেননি। এরপর ২০১৯ সালে মিল্টন তার নিজ বাড়ির পাশেই ‘চন্দ্রকান্ত মেমোরিয়াল চার্চ’-এর কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সহকারী সচিব মো. তরিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করেন। পরে বিষয়টি ধরা পড়ে বলে ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে।

ডিবির চার্জশিটে বলা হয়েছে, মিল্টন সমাদ্দার রাস্তায় কোনো অসুস্থ বয়স্ক, পচা গলা, পাগল, প্যারালাইজড লোক বা অটিস্টিক শিশু অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে আছে খবর পেলে লোকজনের মাধ্যমে রাস্তা থেকে তুলে অফিসে আনতেন। পরে তার আশ্রমের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে নিজেই তাদের ক্ষতগুলো পরিষ্কার করতেন। মানুষকে ধোঁকা দিতে নিজের প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারদের ভুয়া নাম লিখে বোর্ডে লাগিয়ে রাখতেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে কোনো ডাক্তার নেই। তিনি নিজেই অপারেশন করে নিজেই তাদের চিকিৎসা করতেন। মিল্টন তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার কিশোর বালার সহযোগিতায় বয়স্কদের শরীরে কোন পচন বা গ্যাংগ্রিন থাকলে নিজেই ব্লেড দিয়ে কাটাছেঁড়া করতেন। প্রয়োজনে নিজেই হাত-পা কেটে ফেলতেন। ব্লেড, ছুরি দিয়ে কাটাছেঁড়ার ফলে অধিক রক্তক্ষরণের কারণে চিৎকার করলেও তাতে কর্ণপাত করতেন না মিল্টন।

ডিবির চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, মিল্টন সমাদ্দার তার আশ্রমে যাদের নিয়ে আসতেন তাদের বেশিরভাগ প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও প্যারালাইজড। এসব বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও প্যারালাইজড মানুষ বেশিরভাগ সময় অস্বাভাবিক আচরণ করলে তার লোকজন তাদের শারীরিক নির্যাতন করত। অনেক সময় অসুস্থ বা প্যারালাইজড রোগীদের আহত করে তাদের শরীরে অসংখ্য ক্ষত তৈরি করা হতো। এরপর মিল্টন নিজেই এসব ঘা বা ক্ষত অপারেশন করে সেলাই করতেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ গেল বিএনপি নেতার

ইতিহাসের ভয়াবহতম বিপদে ইসরায়েল, আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান

ইয়ামালকে যে চ্যালেঞ্জ দিলেন ফ্লিক

সবকিছুতেই তারা জড়িয়ে থাকেন অদৃশ্য ছায়ার মতো : শাকিব

পাকিস্তানে ব্যাপক গোলাগুলি, ৩ পুলিশ নিহত

বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ চলছে

‘শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে’

নারীর ঘর থেকে পুলিশ সদস্য আটক

লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি, থানায় জিডি

নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে বক্তব্যে জামায়াতে আমিরের দুঃখ প্রকাশ

১০

পাবিপ্রবির লেকে মাছ ধরার উৎসব, মিলল ২০ কেজির গ্রাস কার্প

১১

কুয়েটে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পেলেন অধ্যাপক ড. হযরত আলী

১২

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরবেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদাও

১৩

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট

১৪

রাবি রেজিস্ট্রারের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ

১৫

উত্তেজনার মধ্যেই নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান

১৬

নির্বাচন না করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে : দুলু

১৭

আলোকিত মানুষ তৈরি করছে পাহাড়গাঁও পাঠাগার

১৮

মেয়ের জামাইয়ের ছুরিকাঘাতে শাশুড়ি নিহত

১৯

ভারতের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে পাকিস্তানের হিন্দুরা

২০
X