আম পাড়াকে কেন্দ্র করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাকিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়ের হওয়া ‘হত্যাচেষ্টা’র মামলাটি নিয়ে সমালোচনা চলছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলা ডিসিপ্লিনের ১৮ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমানের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে।
রোববার (১৮ মে) নোমানের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মিনা মিজানুর রহমান।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হরিণটানা থানার ওসি শেখ খায়রুল বাশার মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নোমানের ৩ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেন। মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
হত্যাচেষ্টার মামলা অতিরঞ্জিত হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইশরিয়াক কবির বলেন, ২০-৩০ জনকে নিয়ে কেউ হত্যা করতে আসে না। তার হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। হয়তো তাৎক্ষণিক মেজাজ হারিয়ে এমন করেছে। তবে তদন্ত করে দেখতে হবে ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা আছে কী না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এসএম মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, রিমান্ডের বিষয়ে আমরা জানি না, আমরা তো রিমান্ডের জন্য বলিনি। আমরা হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত ৩০৭ ধারাটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দিয়েছি।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী মো. তাসবি হাসান বলেন, নোমানের কাজ দণ্ডনীয়। কিন্তু প্রশাসন যেটা করেছে সেটা করেছে অতিরঞ্জিত। এটাকে ‘হত্যাচেষ্টা’ বলা বাড়াবাড়ি।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী মিনা মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩০৭ ধারাটি (হত্যাচেষ্টার অভিযোগ) প্রত্যাহারের জন্য একটি চিঠি দিয়েছে ঠিকই, তবে এখন বিষয়টি তদন্তাধীন। মামলা এখন তদন্তাধীন অবস্থায় আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নয়। তদন্তে যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে চার্জশিট দাখিল হবে।
৩০৭ ধারা বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ খায়রুল বাশার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। কিন্তু চিঠি দিলেও কোনো ধারা বাদ হবে না আবার যুক্তও হবে না। তদন্তের পরে বোঝা যাবে কী হবে।
এর আগে ৩ মে অনুষ্ঠিত ২৩১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় মোবারক হোসেন নোমানের স্নাতক সনদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহারে সংযুক্ত করা হয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০৭ (হত্যাচেষ্টা), ৩২৩ (আঘাত), ৩২৫ (গুরুতর আঘাত), ৪৪৭ (অবৈধ অনুপ্রবেশ) ও ৫০৬ (হুমকি)।
এর আগে গত ২ মে (শুক্রবার) বিকেলে আম পাড়ার দায়ে ৪ শিক্ষার্থীকে চোর সাব্যস্ত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিবাদ জানাতে ২৫-৩০ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আম পাড়তে যান। সেখানে ভুক্তভোগী শিক্ষক হাসান মাহমুদ সাকি নোমানের কাছে লাঞ্ছনার শিকার হন।
আজ আদালতের রায় ঘোষণার পর, নোমানকে নিয়ে যাওয়ার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, তিনি বারবার ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইছিলেন আর বলছিলেন, শিক্ষক যদি এসে আদালতে আমাকে ক্ষমা করেন, তাহলে এর একটি সুরাহা হতে পারে।
ঘটনার দিন রাতেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তিন দফা দাবি জানায় এরপর বিকেলে সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার, ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং তার স্নাতক সনদ সাময়িক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ‘অ্যাটেম্পট টু মার্ডার’ ধারায় মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়।
মন্তব্য করুন