চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা’ নামে একটি বিবৃতি শুক্রবার (৩০ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে শিবির কর্তৃক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। তবে উক্ত বিবৃতি ঘিরে ইডেন কলেজে তৈরি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও বিভ্রান্তি।
কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এই বিবৃতির বিষয়ে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। কেউই এতে অংশগ্রহণ করেননি বা সম্মতি দেননি। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিবৃতি দেওয়ার আগে কিংবা পরে কোনো আলোচনা সভা, মতামত গ্রহণ বা প্রতিনিধিত্বের কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
একজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই পোস্টটা কারা দিয়েছে, আমরা জানি না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এমন কোনো বিবৃতির বিষয়ে অবগত নই। আমাদের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, সেটা খুবই দুঃখজনক।’
বিতর্কিত বিবৃতিটি শেয়ার করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইডেন কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া শাইনা এবং আলভি ইবনে অথৈ। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুমাইয়া শাইনা বলেন, ‘আমি অনলাইনে পেয়েছি, সেখান থেকেই শেয়ার দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানি না।’
অন্যদিকে আলভি ইবনে অথৈর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি কিছু বলতে বাধ্য নই। এটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া, গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে দেওয়া এক সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী আনাতোলিয়া স্কাইয়ার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কলেজের অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নাম ব্যবহার করে অনুমতি ছাড়াই রাজনৈতিক বিবৃতি প্রচার করা শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকারের অপব্যবহার। এটি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি কলেজের নিরপেক্ষতা ও একাডেমিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তারা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের পরিচয় ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের মতাদর্শ প্রচার করা অত্যন্ত অনৈতিক। এমন কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক চর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং শিক্ষাঙ্গনের নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে।
বিষয়টি নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. শামছুন নাহার বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে অবগত নই। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’
এখন পর্যন্ত কলেজ প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি, কিংবা বিতর্কিত বিবৃতির উৎস সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, ভবিষ্যতে যেন তাদের পরিচয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনের সতর্ক নজর ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
মন্তব্য করুন