চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রশিবিরের এক নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত নেয়ামত উল্লা ফারাবি (আবরার ফারাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের বর্তমান সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
তার ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ও জামায়াত-শিবিরবিরোধী বেশকিছু ছবি ও পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিবির নেতা আবরার ফারাবি একসময় যুক্ত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে। থাকতেন ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’ (ভিএক্স) নিয়ন্ত্রিত সোহরাওয়ার্দী হলে। হলে থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন মিছিল, মিটিং ও সমাবেশে সামনের সারিতে থাকতেন ফারাবি।
এছাড়াও তার পুরাতন ফেসবুক আইডি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের মিছিল, মিটিংয়ের ছবি ও পোস্ট নিয়মিত করতেন তিনি। এমনকি জামায়াত-শিবিরবিরোধী পোস্ট করতেও দেখা গেছে এই শিবির নেতা ফারাবিকে।
ফারাবির ফেসবুক প্রোফাইল থেকে আরও দেখা গেছে, শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও উপ-গ্রুপ ভিএক্সের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়কে অভিনন্দন জানিয়ে ‘প্রিয় ভাই’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিনকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েও পোস্ট করেন তিনি।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বরে তৎকালীন প্রক্টরের ছবি দিয়ে ফারাবি লেখেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা ড. Robiul Hasan Bhuiyan স্যার (সাবেক প্রক্টর)। শিবিরের মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্টে প্রগতির পতাকা উড়ানোর জন্য উনারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। ছাত্রলীগ করার অপরাধে যৌবনের ওনার জীবনের অনেকগুলো বসন্ত হারিয়েছেন। আজ যখন দেখি উনার মতো ত্যাগী মানুষের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে তখন কষ্ট লাগে। এজন্য কি উনারা শিবিরের সাথে যুদ্ধ করেছিল। মনে রাখবেন রবিউল হাসান ভুইয়া স্যাররা আমাদের সম্পদ।’
এছাড়াও ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর জামায়াত শিবিরকে ‘খুনী’ সম্বোধন করে ফারাবি লেখেন, ‘২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুনী জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জনপ্রিয় ছাত্রনেতা শহীদ আলী মরতুজা চৌধুরী ভাইয়ের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। দল টানা ক্ষমতায় থাকার পরও দুঃসময়ে জীবন দেওয়া একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো না পাওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা ও জামায়াত বিরোধী পোস্ট নিয়ে জানতে চাইলে আবরার ফারাবি বলেন, ২০২২ সালের জুনের ১৭ তারিখ পর্যন্ত আমি ছাত্রলীগেই ছিলাম। পরবর্তীতে ২০২৩ সাল থেকে আমি পুরোদমে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে ছাত্রশিবিরে যুক্ত হই। তারপর থেকে আমি আর হলে থাকিনি। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে থেকেই মানোন্নয়ন করি। পরবর্তীতে সদস্য হয়ে ছাত্রশিবিরের দায়িত্বে যাই।
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে ফারাবি বলেন, ছাত্রলীগ করেছি এটা আমি অস্বীকার করি না কিন্তু ২০২২ সালের জুনের পর থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, তার (ফারাবি) বিরুদ্ধে এখন যে বিষয়গুলো সামনে আসছে সবগুলো ২০২১-২২ সালের পোস্ট। তখন তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়ে সংগঠনের সব ধারা পূর্ণ করে মূলনীতি মেনে মানোন্নয়ন করেন এবং দায়িত্বশীল পর্যায়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে তিনি আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত আছেন বরং আগস্টের পূর্বে ২০২৪ সাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী হল শাখার দায়িত্ব পালন করছেন। ২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাকে সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন