দুপুরের তীব্র রোদে লিফলেট হাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন বৈশাখী। গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে বারবার কপালের ঘাম মুছছেন, তবুও যেন ক্লান্তি নেই। ক্লাস শেষে হলের পথ ধরা শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নিজের নির্বাচনী লিফলেট। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করা ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন পাওয়া এই প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয় কালবেলা প্রতিনিধির।
আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মোট ৮টি প্যানেল। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এসব প্যানেল থেকে মনোনীত শীর্ষ দুই পদে ১৬ জন প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। সংগঠনের শতশত নেতাকর্মীর মধ্য থেকে বাছাইয়ের পর শীর্ষ পদে নিজের মনোনয়ন পাওয়াকে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ হিসেবেই দেখছেন তিনি।
বৈশাখীর বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা করেছেন ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে। পারিবারিকভাবে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার। রাজনীতির চেয়ে বরং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ভেবেছিলেন দেশে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাবেন।
তবে জুলাইয়ে যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরে, তখন আর বসে থাকতে পারেননি। সহপাঠী ও সিনিয়র-জুনিয়রদের পাশে দাঁড়াতে অন্যদের মতো নিজেও সরাসরি রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ ও পুলিশের বিরুদ্ধে লড়তে আন্দোলনকারীদের জন্য ঘাড়ে লোহার রড বয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি সেসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়।
বৈশাখী বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্টের পর পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আন্দোলনে নারীদের এত বেশি অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সবকিছু থেকে আমাদের দূরে রাখার চেষ্টা শুরু হয়। যা আমার একদমই ভালো লাগেনি। সেখান থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই। এ ক্ষেত্রে ছাত্রদলকে আমার ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছি। সবখানেই আমাকে ছেলেদের তুলনায় বেশি স্পেস দেওয়া হয়েছে। সবসময়ই বেশ সেফ ফিল করেছি। মনে হয়েছে, আমি আমার পরিবারের সঙ্গেই আছি।’
শীর্ষ পদে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে একেবারেই ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই না। বরং এমনই তো হওয়া উচিত। রাজনীতি শুধুমাত্র পুরুষের কাজ, আমি এই ধারণাটা ভাঙতে চাই। সবাইকে যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে, লিঙ্গভেদে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে সমানসংখ্যক নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে, সেখানে শীর্ষ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নিজেকে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী মনে করি না। বরং অন্যান্য সংগঠন যে তাদের সংগঠনে থাকা যোগ্য নারীদের মূল্যায়ন করতে পারেনি, এটা বেশ দুঃখজনক।’
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী এই প্রার্থী বলেন, ‘দীর্ঘদিন নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করায় তাদের সমস্যাগুলো আমি সহজেই ধরতে পারি। প্রাত্যহিক জীবন থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিং, স্লাটশেমিংয়ের শিকার হওয়া নারীরা যখন আমাকে তাদের জন্য কিছু করতে বলে তখন আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ছেলেদের থেকেও অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। শুধু আমি না, এবারের জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল অতীতের সব সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
মন্তব্য করুন