ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের অনেকেই বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছেন। অন্তত ছয়জন প্রার্থীর সামাজিকমাধ্যমে এমন ছবি ও ভিডিও দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। তবে শুধু নির্বাচনে প্রার্থীদের নয়, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময়ে নানা অর্থবহ ক্ষেত্রে বিড়ালের সঙ্গে ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করতে দেখা যায়।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিড়াল ও কুকুর নিয়ে ছবি পোস্ট করতে দেখা গেছে। মূলত, তারা এ ছবি দিয়ে সফট পাওয়ার পলিটিক্সকে ইঙ্গিত করতেন।
এর আগে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুকে বিড়ালের সঙ্গে তিনটি ছবি পোস্ট করেন। যা সে সময় নেটিজেনদের মাঝে সাড়া ফেলে।
মূলত, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তিরা অনেক সময় নিজেদের কোমল এবং জনবান্ধব হিসেবে প্রকাশ করতে বিড়ালের ছবি ব্যবহার করেন। বিড়ালকে আবার কৌশলী প্রাণী হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরা বিড়াল দিয়ে বোঝান- তারা ভেতরে ভেতরে শক্তিশালী কৌশল নিয়েে এগোচ্ছেন।
বাংলায় ‘বিড়ালের মতো চলাফেরা’ বলতে গোপনীয় বা কৌশল বোঝানো হয়। রাজনীতির মাঠে এই গোপনীয়তা এবং কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টার্ম। কৌশলগত পদক্ষেপের একটি অংশ হিসেবে বিড়ালকে প্রতীকী ধরা হয়ে থাকে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ‘বিড়াল’ শব্দটি রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কয়েকজন প্রার্থীকে বিড়াল নিয়ে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে দেখা গেছে, যা সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি কেড়েছে।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েমের ছবির সঙ্গে একটি বিড়াল যুক্ত করে তার নির্বাচনী প্রচার চালান ভক্তরা। স্ট্রিট ক্যাটস নামে একটি পেজ থেকে বিড়ালসহ তার একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বিড়াল সাদিকের কাঁধের পেছন থেকে দুই হাত দিয়ে তার চোখ আটকে রেখেছে। সাদিক হাসছেন। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘ বিড়াল প্রেমি আবু সাদিক ভাই, ব্যালট ২২-এ ভোট চাই।’
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান কয়েকটি বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘শহীদুল্লাহ্ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবিতে দেখা যায়, একটি বিছানায় বসে আছেন আবিদ। সেখানে একটি মা বিড়াল ও তার বাচ্চারা আছে। আবিদ মা বিড়ালের মাথায় আদর করছেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট পেজে জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদের বিড়ালের সঙ্গে খুনসুটির ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে ভোট চাওয়া হয়।
এরপর একই প্যানেলের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম বিড়ালে সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‘ফরহাদ ভাইয়ের সঙ্গে বিলাইয়ের ছবি একদমই যাচ্ছে না। বিলাইয়ের ছবি যায় সিবগা ভাই, সাদিক ভাই, মহি ভাই আর এই ছবিওয়ালা মশাইয়ের (নিজ)। সারাদিন প্রচারণা করে এই বিলাই নিয়ে কাহিনি এখনো বুঝছি না।’
শিক্ষার্থী ঐক্যজোটের কমনরুম, পাঠকক্ষ এবং ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদপ্রার্থী উম্মে সালমাও এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন। তিনি নাম দিয়েছেন, ‘বিলাই ট্রেন্ড’। ফেসবুকে একটি সাদা বিড়াল কোলে নিয়ে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ফরহাদ ভাইকে বিলাইর কথা বললাম, ভাই বিলাইর ভিডিও ছেড়ে পুকি জিএস হয়ে গেল। বিলাই ট্রেন্ড চলে আসলো। আজ সারাদিন বিলাই খুঁজছি, যাতে একটু ট্রেন্ডে গা ভাসানো যায়। মিয়াউ, মিয়াউ ফ্রম শামসুন নাহার হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী ফাতিমা তাসনিম জুমা। ফেসবুকে বিড়াল কোলে নিয়ে তিনিও একটি ছবি দিয়েছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ বিলাই নিয়ে পোস্ট করলে নাকি মেয়েদের ভোট বেশি পাওয়া যায়। ব্যালট নাম্বার-৯।’
বিড়ালকে অনেক সময় সৃজনশীল ও স্বাধীনচেতা মানুষের সঙ্গী হিসেবে ধরা হয়। ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের এই বিড়ালের ছবি ও ভিডিও নিয়ে প্রচারণা একটি রাজনৈতিক কৌশল বা আচরণের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। ক্ষমতার পালাবদলের পর এবারের নির্বাচন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটা আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি পদের জন্য লড়ছেন ৪৭১ জন। হল সংসদে সব মিলিয়ে প্রার্থী হয়েছেন এক হাজার ৩৫ জন।
মন্তব্য করুন