ডাকসু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের মাধ্যমে শহীদদের আকাঙ্ক্ষার আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচন বিনির্মাণ করতে চাই বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপিপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম।
মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
সাদিক কায়েম বলেন, আমরা এ নির্বাচনের মাধ্যমে সারাদেশকে একটি ম্যাসেজ দিতে চাই। এজন্য আমরা সকল প্রার্থীকে বলবো দায়িত্বশীল আচরণ করতে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করবো যারা আচরণবিধি ভঙ্গ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, এখানে যারা ছাত্রসংগঠন আছে, নির্বাচন কমিশন আছে আমরা সকলে দায়িত্বশীল আচরণ করবো। সকালে যেভাবে নির্বাচন শুরু হয়েছে, আমরা আশা করবো শেষ পর্যন্ত সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবে। আমরা সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি।
সাদিক কায়েম বলেন, কেউ যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বা নির্বাচন কমিশন কাউকে অতিরিক্তি সুবিধা দেয় তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা চাই না। আমরা এ নির্বাচনের মাধ্যমে সারাদেশে চমৎকার বার্তা দিতে চাই।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে আমরা যে ভোটাধিকার দিতে পারিনি, গণতন্ত্রে আমাদের কোনো অধিকার ছিল না, সেই জায়গায় আমরা গণতন্ত্রের একটি স্থায়ী রূপের দিকে ম্যাচিউর অবস্থায় যেতে চাই। আমরা আশা করছি ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সারাদেশকে সেই বার্তা দিতে পারব।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন, যা ডাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে নারী ৬২ জন। অন্যদিকে, ১৮টি হলে ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ও ছাত্র অধিকার পরিষদ আলাদা প্যানেল দিয়েছে। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচন করছে দুটি প্যানেলে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রদের পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে প্যানেল রয়েছে ১০টির মতো।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৮৭৩ এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের ডাকসু ও হল সংসদের মোট ৪১টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ব্যালট যুদ্ধ বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা চলবে। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে গণনা শুরুর পর ফল প্রকাশ করবে। একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময় নিলেও কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই সব কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ে ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট গণনা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনে ফল গণনা প্রদর্শিত হবে। সবশেষে সিনেট ভবন মিলনায়তনে সব কেন্দ্রের মোট ফল ঘোষিত হবে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ৮টি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি থাকছে মোবাইল প্যাট্রল, ডগ স্কোয়াড, বিশেষায়িত টিম, বোম এক্সপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ডিবি (সাদা পোশাকে), সিসিটিভি মনিটরিং সেল এবং স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স।
আলোচনায় যারা: এবারের নির্বাচনে ১০টি প্যানেল ও বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মূলত তিনটি প্যানেল নিয়ে হচ্ছে বেশি আলোচনা। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাগছাস সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে বিভিন্ন জরিপ ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এর বাইরে উমামা ফাতেমা ও বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীও আলোচনায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিপি পদে শামীম হোসেন, জিএস পদে আরাফাত চৌধুরী এবং এজিএস পদে তাহমীদ আল মুদাসসীর চৌধুরীর নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন