জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের’ প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৩৪। জিতু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। আন্দোলনের আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৩ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ ভোট।
এজিএস (পুরুষ) পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ফেরদৌস আল হাসান। তিনি ২ হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এজিএস (নারী) পদে ৩ হাজার ৪০২ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা।
জাকসু সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা আগামী এক বছর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী কাঠামোয় সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে জাকসুর ভিপি ও জিএসের পদ দুটি সম্মান, দায়িত্ব ও প্রভাবের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দুই সংস্থা সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ার সুযোগ পাবেন জাসকুর পাঁচ সদস্য। তবে তাদের নাম এখনো জানা যায়নি। সেখানে তারা হাজারো শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে ছাত্রদের স্বার্থবিরোধী কোনো বিষয় এলে সেখানেই তারা প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও তাদের সম্পৃক্ততা থাকবে।
তবে জাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কী কী কাজ সম্পাদন করবেন ভিপি ও জিএসসহ অন্যরা, তা জেনে নেওয়া যাক—
কার্যাবলি
১. সংসদ সদস্যদের জন্যে কমনরুম রক্ষণাবেক্ষণ করা। সেখানে দৈনিক সংবাদপত্র, মাসিকপত্র, সাময়িকপত্র পাঠের ব্যবস্থা করা এবং আভ্যন্তরীণ ক্রীড়ার বন্দোবস্ত করবেন।
২. শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা। সৃজনশীলতার বিকাশে সাময়িকপত্র, জার্নাল, বুলেটিন, ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকা প্রকাশ করা।
৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্মিলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। সদস্যদের মধ্যে বক্তৃতা, বিতর্ক, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এ ধরনের কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালার আয়োজন করা।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা ৷
৫. আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধি অথবা দল পাঠানো।
৬. বিদ্যায়তনিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠানো এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো।
৭. সমাজসেবামূলক কাজ, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণমূলক কাজ, বৃক্ষরোপণ, জনকল্যাণধর্মী ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে সংসদের সদস্যদের মধ্যে সমাজসেবার উৎসাহ বাড়ানো।
৮. তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ নিশ্চিতকরণ, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও ডিজিটাল নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ বৃদ্ধিকরণ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
৯. শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
১০. পেশাজীবনভিত্তিক চিন্তা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কর্মসহায়ক উদ্যোগ গ্রহণ করা ৷
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
সংসদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হবে—
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
২. বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গুণগত বিদ্যাচর্চার সুযোগ গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাগত সুযোগ ও সুবিধা অর্জন করা।
৩. শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক রূপে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের উন্মেষ ঘটানো।
৪. বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের বাইরের অনুরূপ বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া সংক্রান্ত কার্যাবলির আয়োজন ও সংগঠন।
উল্লিখিত বিষয়বহির্ভূত এমন সব কাজ সম্পাদন করা, যা কার্যকরী সংসদ স্থির করবে এবং সভাপতি অনুমোদন করবেন।
মন্তব্য করুন