

শীতের আগমনে লোকজ ঐতিহ্য, শিল্পচর্চা আর সম্মিলিত সৃজনশীলতাকে এক সুতোয় গেঁথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদে ফিরে এসেছে বহুল প্রতীক্ষিত ‘শীত উৎসব’। কাঁথা সেলাই, জামদানি নকশা, গ্রামীণ উপকরণ আর বাংলার লোকজ মোটিফে সাজানো পুরো প্রাঙ্গণ যেন রূপ নিয়েছিল জীবন্ত শিল্পভূমিতে।
নাচ, গান, কবিতা, প্রদর্শনী, পিঠা-পুলি আর নানা সৃজনশীল স্টলের সমাহারে এই উৎসব হয়ে ওঠে শিল্প, সংস্কৃতি ও মানুষের মিলনমেলা— যেখানে শীতকে বরণ করা হয় শেকড়ের আলোয়, শিল্পের ভাষায়। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) আয়োজিত অনুষ্ঠানটির নামও ছিল ‘শীত উৎসব ১৪৩২’। এদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল শিল্পের বর্ণিলতা ও লোকজ ঐতিহ্যের এক অনন্য সংমিশ্রণ।
‘শীতের হিমেল ছোঁয়ায় জেগে উঠুক উৎসবের গান, শিশিরভেজা মুহূর্তে জমুক অনাবিল আনন্দের টান’— কাব্যিক এ মন্ত্রকে ধারণ করে পুরো চারুকলা অনুষদ সাজানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাঁথা সেলাই ও জামদানি নকশার আদলে। প্রাঙ্গণজুড়ে সাজানো ছিল গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতীক হাঁড়ি, পাখি ও সূর্যমুখী ফুল, যা পুরো পরিবেশকে করে তুলেছিল নান্দনিক ও লোকজ সৌন্দর্যে ভরপুর। এ ছাড়া ছিল বাংলার নানা ঐতিহ্য। চারুকলার শিক্ষার্থীদের নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তিতে জমজমাট ছিল পুরো আয়োজন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল শীত উৎসবের স্টল। নানা স্টলে খাবার থেকে শুরু করে পোশাক, গয়না, মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বসে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া মেলা, স্টল, পিঠা-পুলি, মুড়ি-মুড়কির আয়োজন—প্রতিটি মুহূর্ত শিল্প, সংগীত ও মানুষের আন্তরিকতায় ছিল ভরপুর।
এ ছাড়া পুরো প্রাঙ্গণ সেজে উঠেছিল শিল্পের স্বর্গভূমিতে— যেখানে শিল্পীর নিপুণ হাতে মঞ্চসজ্জা, রাস্তার আলপনা, পুকুর সজ্জা, দেয়ালচিত্র, রঙিন মাটির হাঁড়ি, ঝলমলে বাতি, কাগজের পাখিসহ নানা কিছু দিয়ে সাজানো হয়েছিল পুরো প্রাঙ্গণ। নাচ-গান তো ছিলই, আরও ছিল পিঠার আয়োজন। শীতের পিঠার একটি স্টলেও ভিড় লেগে ছিল সারাবেলা। রাতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন আশপাশের শত শত মানুষ।
শীত উৎসবে অংশ নিয়ে চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়রা তাবাসসুম সাবা জানান, পুরো আয়োজনটাই খুব গোছানো, প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। শীত উৎসব রাবি চারুকলার একটি সিগনেচার প্রোগ্রাম— এটি শুধু একটি আয়োজন নয়, বরং আমাদের শিল্পচর্চা, ঐতিহ্য আর সম্মিলিত শ্রমের এক জীবন্ত উদযাপন। এই উৎসবের প্রতিটি অংশে আমাদের ভালোবাসা ও পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে। এ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা শুধু আনন্দ ভাগ করে নিই না, বরং নতুন প্রজন্ম ও সবার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির সংযোগ তৈরি করি।’
শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত শীত উৎসব সম্পর্কে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. বনি আদম কালবেলাকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আয়োজন। এতে আমাদের কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমার সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তবুও শীতকে বরণ করে স্টেজ সাজানো থেকে শুরু করে পুরো চারুকলা অনুষদে যে ভিন্ন এক উৎসবমুখর আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা সত্যিই ভালো লেগেছে।’
মন্তব্য করুন