জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে নতুন সংগঠন করেছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের একাংশ। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামের নতুন সংগঠনটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এর আগে, ২০১৮ সালে আওয়ামীপন্থিরা ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ গঠন করেছিলেন। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন সংগঠনের ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়।
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামের এই সংগঠনের আহ্বায়ক হয়েছেন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী। এ ছাড়াও এই কমিটিতে আরও সাতজন সদস্য রয়েছেন।
এদের মধ্যে আছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, আইবিএ এর অধ্যাপক আইরিন আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মার্লিহা নার্গিস আহমেদ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন এবং জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর কতিপয় সুবিধাবাদী শিক্ষকের ইন্ধনে আওয়ামীপন্থি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের আস্থায় না নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটায়। এভাবে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিতর্কিতদের দিয়ে সংগঠনটির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এতে তিনি নিজের ব্যক্তি ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে সংগঠনটিকে ব্যবহার করতে চরম স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।’
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি দেখান ও বিতর্কিতদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর উপাচার্য তার নিজ ভাই পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুনকে সংগঠনের আহ্বায়ক করে বিজ্ঞপ্তি দেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগে বিতর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, গত এক বছরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য ভীষণভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্যের পেশাদারিত্ব নিয়ে বলা হয়, ‘সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির নির্বাচনী বোর্ডে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে একাডেমিক ইথিকস ও পেশাদারিত্বের অভাব দেখিয়েছেন।’
উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, উপাচার্য পদ ও সরকারের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক ও বিব্রতকর। আমরা বিশ্বাস করতে চাই না যে, এ অভিযোগ সত্য। তবে উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এতে আরও বলা হয়, যাদের কখনো জাতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি, তারাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য উপাচার্যকে ক্রীড়নকে পরিণত করেছে। সর্বোপরি বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ও উপাচার্যের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জাতীয় অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে ও করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন এই শিক্ষক সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
মন্তব্য করুন